আমাদের ভারত, রামপুরহাট, ৮ জানুয়ারি: মোবাইলে ভিডিও কলের মাধ্যমে ট্রেনেই প্রসব করানো হল এক প্রসূতির। পরে রামপুরহাট ষ্টেশনে ওই প্রসূতির চিকিৎসা করিয়ে তাকে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা গিয়েছে, তামিলনাড়ুর পেরাম্বুলার জেলার টথুকুডি এলাকার বাসিন্দা অরুণাচলম শিবা রামস্বামী সেনা বাহিনীর স্বাস্থ্যকর্মী হিসাবে অরুণাচল প্রদেশে কর্মরত। মঙ্গলবার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে ১২৫০৪ আগরতলা – ব্যাঙ্গালুরু হামসফর এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি গুয়াহাটি থেকে ট্রেন ধরেছিলেন। ট্রেনের বি ৯ নম্বর কোচে সফর করছিলেন। ওই দম্পত্তি জানিয়েছেন, বুধবার ভোরের দিকে ট্রেন যখন নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশনে ঢোকে তখন থেকে স্ত্রীর প্রসব যন্ত্রনা ওঠে। ট্রেন ছাড়ার কিছু পর তার রক্তক্ষরণ হতে শুরু করে। কিন্তু সে সময় ট্রেনে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। ফলে অসহায় হয়ে ট্রেনে ঘোরাফেরা করতে থাকেন রামস্বামী। সে সময় এক মহিলা যাত্রী তার নিকট আত্মীয় স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে ফোন করে বিষয়টি জানান। এরপরেই তার নির্দেশে প্রসূতিকে ট্রেনের বাথরুমের কাছে নিয়ে গিয়ে অন্যান্য মহিলারা কাপড় দিয়ে ঘিরে ধরেন। সেখানে মহিলা যাত্রী চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে প্রসব করান। ট্রেনেই ওই প্রসূতি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সকালের দিকে ট্রেন মালদা ষ্টেশনে পৌঁছলে রেলের চিকিৎসকরা রক্তক্ষরণ বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ইনজেকশন এবং ওষুধ দেন। এরপর ফের ট্রেন যাত্রা শুরু করে। কিন্তু প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি।
খবর পেয়ে ট্রেনের অপেক্ষায় ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিলেন ষ্টেশন ম্যানেজার পুষ্কর কুমার, রেলের চিকিৎসক এস ভাওয়াল এবং জিআরপি আইসি গৌতম মুখোপাধ্যায়। সকাল ১০ টা ৪৩ মিনিটে ট্রেন রামপুরহাট ষ্টেশনে থামে। ট্রেন থামা মাত্রই ট্রেনের মধ্যেই চিকিৎসা শুরু করা হয়। আধঘণ্টার উপর চিকিৎসার পর প্রসূতি সুস্থতা বোধ না করায় তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। এই প্রক্রিয়ার জন্য ৪৯ মিনিট ট্রেন রামপুরহাট ষ্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল। রামস্বামী বলেন, “এর আগে ৩ ও ৪ বছরের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। এবার তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছে স্ত্রী। সন্তান সম্ভবা হওয়ায় কাজে ছুটি নিয়েই বাড়ি ফিরছিলাম। বাড়িতে রেখে ফের কর্মস্থলে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ট্রেনেই সন্তান হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হল। তবে মা ও শিশু দুজনেই সুস্থ থাকায় আমি খুশি”।
চিকিৎসক এস ভাওয়াল বলেন, “প্রসূতির রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। তাছাড়া ভাজাইনায় সেলাই দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এখন সেই চিকিৎসা না করালে পরে সমস্যা হতে পারে। তাই তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে”। ষ্টেশন ম্যানেজার পুষ্কর কুমার বলেন, “মালদা থেকে আমাদের খবর দেওয়া হয়। সেই মতো আমরা প্রস্তুত ছিলাম। চিকিৎসা করে সুস্থ না হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে”।