আমাদের ভারত, ৯ ডিসেম্বর:হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াতের মৃত্যু ঘিরে রহস্যদানা বাধতে শুরু করেছে। নিছক দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পনা মাফিক ঘটানো দুর্ঘটনা? উঠেছে একাধিক প্রশ্ন। সেনাপ্রধান রাওয়তের মৃত্যুর পেছনে বিদেশী শক্তির হাত থাকার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
সেনাপ্রধান রাওয়াতের হেলিকাপ্টার দুর্ঘটনার সঙ্গে তাইওয়ানের এক সেনাপ্রধানের মৃত্যুর মিল খুঁজে পাচ্ছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা , আর এর জন্য বেজিং -এর হাত থাকার গন্ধ পাচ্ছেন তারা। তেমনি বেজিং দাবি করেছে, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনায় রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের চুক্তি মেনে নিতে পারেনি আমেরিকা। তাই এই দুর্ঘটনা তারাও ঘটাতে পারে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, তাইওয়ানের এক সেনাপ্রধানের মৃত্যুর সঙ্গে রাওয়াতের দুর্ঘটনার মিল নিতান্তই অমূলক নয়। দেশের প্রাক্তন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত একাধারে ছিলেন মাউন্টেন ওয়ারফেয়ার দক্ষ কৌশলী। অন্যদিকে সন্ত্রাস দমনেও পারদর্শী ছিলেন তিনি। মোদী জামানায় রাওয়াতের নেতৃত্বেই মায়ানমারের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল ভারতীয় সেনা। পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধে অত্যন্ত পারদর্শী হওয়ায় বারবার ভারতের মাটিতে চিনা আগ্রাসনকে রুখে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন রাওয়াত। ডোকলামে লাল ফৌজকে আটকে দিতে রাওয়াতের বড় ভূমিকা ছিল। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হিসেবেও অরুণাচল, উত্তরাখণ্ডে চিনা অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে গালওয়ান সংঘর্ষকেও কড়া হাতে সামলেছেন তিনি। এক কথায় বলতে গেলে চিনা ফৌজের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বিপিন রাওয়াত।
অন্যদিকে চিন দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানকে নিজেদের জমি বলে দাবি করে এসেছে। বেজিংয়ের আগ্রাসনের মুখে পড়েছে বারবার তাইওয়ান। কিন্তু চিনা আগ্রাসনকে আটকে দিয়ে রেখেছিলেন সেই দেশের চিফ অব জেনারেল স্টাফ শেন ইয়েমিং। তিনি তাইওয়ানে বায়ুসেনার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ২০২০ সালের একটি পাহাড়ি এলাকায় চপার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ইয়েমেনের। আমেরিকার ব্ল্যাক হক চপারে তার সঙ্গে আরো ৭ সেনা কর্তা ছিলেন। সেই কারণেই এই দুই দুর্ঘটনার মধ্যে মিল খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাওয়াতের মৃত্যুর পর নিরাপত্তা কৌশল বিশারদ ব্রহ্ম চেলানি টুইট করে লিখেছেন, রাওয়াতের ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার সঙ্গে মারাত্মক রকমের মিল রয়েছে তাইওয়ানের চিফ অব জেনারেল স্টাফ শেন ইয়েমিংয়ের মৃত্যুর। দুটি দুর্ঘটনায় লালফৌজের আগ্রাসনের দুই পথের কাঁটাকে সরিয়ে দেওয়া হল। তবে তারপরেই অবশ্য তিনি লিখেছেন, এই কাকতালীয় মিল থাকার অর্থ এটা নয় যে দুটি ঘটনার মধ্যে কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিংবা মৃত্যুর পেছনে বহিরাগত কোনও শক্তির হাত আছে। তবে এই দুর্ঘটনা আভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে দিল। বিশেষত হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে এবার থেকে প্রশ্ন উঠবে।
এদিকে রাওয়াতের মৃত্যুর জন্য আমেরিকার দিকে আঙ্গুল তুলেছে বেজিং। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ মিসাইল কিনেছে ভারত। প্রথম থেকেই আমেরিকা এই বিকিকিনির বিরোধী ছিল। ফলে এর মৃত্যুর পেছনে আমেরিকার হাত থাকা অসম্ভব নয়।