আমাদের ভারত, ১১ নভেম্বর:শেষ ২০ বছরে ভোট গণনা নিয়ে এত রোমহর্ষক উত্তেজনা সম্ভবত দেখা যায়নি। সকাল থেকেই চলছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে বেলা গড়াতেই স্পষ্ট হতে শুরু করে এনডিএ জোট আবারও ক্ষমতায় ফিরছে। ২৪৩ আসনের বিহার বিধানসভায় এনডিএ জোট পেয়েছে ১২৫ টি আসন। অন্যদিকে আরজেডি নেতৃত্বাধীন মহাজোট পেয়েছে১১০ টি আসন। নীতীশই ফের মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বিহারে। আর এটাও বলতে দ্বিধা নেই আবারও মোদির ম্যাজিকেই বিহারে ক্ষমতা দখল করেছে এনডিএ।
বিহারে বিজেপিকে জোড় টক্কর দিয়েছে আরজেডি। সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে আরজেডি। ২০২০-র বিহারের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিহারে যে এক নতুন প্রজন্মের নেতার আবির্ভাব হলো তা অস্বীকার করার কোন জায়গা নেই। বিহারে আরজেডিকে একেবারে বিজেপির সমতুল্য স্থানে তুলে এনেছেন তেজস্বী। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ তাকে ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের শিরোপা দিতে উৎসাহী।
গণনা শুরুর প্রথম দিকে হুহু করে এগোচ্ছিল মহাজোট। কিন্তু বেলা বাড়তেই খেলা ঘুরে যায়। আরজেডি কংগ্রেস বাম দলগুলোর মহাজোটকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় বিজেপি নীতীশ কুমারের জোট। সন্ধের সময় লড়াই শুরু হয় গায়ে গায়ে। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ভুল প্রমাণিত করে বিহারে সরকার গড়ল বিজেপি নিতিশ কুমার।
বুথ ফেরত সমীক্ষা বলেছিল সংকটে রয়েছেন নীতীশ। এমনকি চাণক্যও জানিয়েছিল বিহারে তেজস্বীরা ১৮০ টি আসন পেতে পারে। কিন্তু শেষমেশ পরিবর্তন হলো না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়েসিসের মিম এসে বিহারে খানিকটা সুবিধা করে দিয়েছে বিজেপিকে। এই ভোটে তারা পাঁচটি আসন পেয়েছেন। তারা নির্বাচনে লড়াই করার ফলে সংখ্যালঘু ভোট কমেছে আরজেডি কংগ্রেসের। আর তাতেই ভোট কাটাকাটিতে সুবিধা পেয়েছে বিজেপি ও নীতীশ।
একই সঙ্গে, পর্যবেক্ষকদের বড় অংশের মতে সমাজের সব শ্রেণীর ভোট পায়নি আরজেডি। সব বয়সের মানুষ তাদের ভরসা করতে পারেননি। কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তেজস্বীকে যুবসমাজ সমর্থন করলেও লালুর জঙ্গলরাজকে মনে রেখেছে মধ্যবয়স্করা। অনেকের কাছেই মনে হয়েছে তেজস্বী অভিজ্ঞ নয়।
আবার অনেকেই মনে করছেন মহাজোটের হারের কারণ কংগ্রেস। ৭০টি আসনের লড়াই করে মাত্র ২০টি আসনের জিততে পারেনি তারা। বরং ওই আসনগুলিতে আরজেডি লড়াই করলে হয়তো আসন সংখ্যা তাদের বাড়তো।
এদিকে ভোট বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন মহিলাদের ভোট বেশি পেয়েছে বিজেপি ও নীতিশ। পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর মহিলা ভোট ব্যাংক তৈরি করার কৌশল প্রথম থেকেই নিয়ে ছিল বিজেপি ও নীতিশ। বিহারে মদ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছেন তারা। উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস, নানা সামাজিক প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন মহিলারা। তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে বিহারের ভোটে।
তবে সবচেয়ে বড় বিষয় মোদী ম্যাজিক। বিহারে গত ১৫ বছর ধরে টানা ক্ষমতাসীন রয়েছে বিজেপি জোট সরকার। নীতীশ মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিহারের নরেন্দ্র মোদীর গ্রহণযোগ্যতা এখনও যথেষ্ট ভালো। বিহারের ভোট প্রচারে মোদীর সভায় ভিড় দেখেই তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। একথা বিজেপির নেতারাও চিৎকার করেই বলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বিহারের নীতীশ বিরোধী হাওয়া থাকলেও তাকে মোদী টেনে তুলেছেন আবার। তবে ভোটের ফলাফলের পরেও প্রতিশ্রুতি থেকে সরবে না বিজেপি, স্পষ্ট জানিয়েছেন তারা। ছোটো শরিক হলো আবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন নীতীশই। তাই জয় সুনিশ্চিত হতেই ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোদী শাহ।