আমাদের ভারত, ৪ ডিসেম্বর: মেয়েদের জন্য তৈরি ইরান প্রশাসনের যে গোড়া মানসিকতা, তার বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করে প্রথম বড় জয় পেল সে দেশের মহিলারা। এই প্রথম তাদের হাতে ধরা দিল এক বড় সাফল্য। সরকারের বেঁধে দেওয়া পোশাক বিধির বিরুদ্ধে গত দুই মাস ধরে আন্দোলন করছিলেন ইরানের মেয়েরা। পথে নেমে হিজাব ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন হাজার হাজার ইরানি মহিলা। মেয়েদের উপর প্রশাসনের নীতি ও পুলিশের বিরুদ্ধে চলছিল একটানা আন্দোলন। রবিবার জানা গেল, এই আন্দোলনের সামনে হার মানছে ইরান সরকার।রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে নীতি পুলিশ বাহিনীকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে সে দেশের সরকার।
ইরানের সংবাদ সংস্থা আইএসএনএ সূত্রে জানা গেছে, ইরানের কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল মহম্মদ জাফর মন্তাজারি নিজে সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছে, ওই নীতি পুলিশ কোনো দিনই ইরানের কেন্দ্রীয় বিচার ব্যবস্থার অন্তর্গত ছিল না। ইরান সরকারের নীতি পুলিশ বাহিনী গাস্থ এ এরশাদ সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পোশাক বিধি না মানা ইরানের রাজধানীর তেহেরানে এক তরুণী মাহাশা আমিনিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল ইরানের নীতি পুলিশ।হেফাজতে থাকাকালীন ঐ তরুণীর মৃত্যু হয়। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আগুনের গতিতে প্রতিবাদ ছড়ায়। ইরানের মহিলারা পথে নামে প্রশাসনের নীতি পুলিশের বিরুদ্ধে। হিজাব বিরোধী তীব্র আন্দোলন শুরু হয় ইরানে। যাকে সমর্থন জানান বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারন মহিলা পুরুষ এমনকি সেলিব্রেটিরাও। অবশেষে চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হল ইরান প্রশাসন।
গাস্ত এ এরশাদ বা পথপ্রদর্শক বাহিনী পথ চলা শুরু করেছিল ২০০৬ সালে। এই বাহিনী ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহা মাদিনা জাদা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বলা হয়েছিল এই বাহিনীর লক্ষ্য হবে ইরানে হিজাব সংস্কৃতি যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করা এবং মেয়েদের শালীনতার পাঠ দেওয়া।
ইরান প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী বিচার ব্যবস্থার অন্তর্গত না হলেও দেশের সরকারের প্রধানরা এই নীতি পুলিশকে রেখে দিয়েছিল।
সেই নীতি পুলিশের শিকার হয়েছিলেন ইরানি তরুণী আমিনি। পোশাক বিধি না মানায় উচিত শিক্ষা দিতে গাস্ত এ এরশাদ বাহিনী তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলে বন্দি করেছিল। হেফাজতে থাকাকালীন তার মৃত্যু হওয়ায় নীতি পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগের আঙুল ওঠে। ধরে নেওয়া হয় পোশাক বিধি না মানায় শাস্তি দিতে অমানুষিক অত্যাচার হয়েছিল আমিনির উপর। যার ফলে তার মৃত্যু হয়। অন্যান্য বন্দকরাও জানিয়েছিল, আমিনির উপর অত্যাচার করা হয়েছিল। ঘটনার প্রতিবাদে মাহাসার ছবি নিয়ে পথে নামে ইরানি মেয়েরা। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে টানা আন্দোলন চালিয়েছে তারা। দীর্ঘ দুমাস পর তারা ফল হাতে পেল। ১৬ বছর পর বন্ধ হল নীতি পুলিশের পথচলা।