কলমের চারা তৈরি ও ফল বাগিচায় সাথী ফসল চাষের প্রশিক্ষণ দিল বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের ভারত, নদিয়া, ২৪ নভেম্বর: আজ শেষ হল বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সর্ব ভারতীয় ফল গবেষণা কেন্দ্র'(ICAR- AICRP on fruits)এর পক্ষ থেকে কলমের চারা তৈরি ও ফল বাগিচায় সাথী ফসল চাষের প্রশিক্ষণ। দু’ দিনের এই প্রশিক্ষণ শিবিরে পশ্চিমবঙ্গের ৫টি জেলার, যথা- নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, হাওড়া ও হুগলির ১৫ জন কৃষি উদ্যোগী উপস্থিত ছিলেন। উন্নত প্রজাতির ফলের গাছ থেকে কলমের সাহায্যে চারা তৈরি করে তার মধ্যে কী কী সাথী ফসল চাষ করা যায় মূলত তার উপর এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কী ধরনের ফল কোন মাটিতে চাষ করবেন, কীভাবে ফল চাষ করলে ফলন বাড়ানো যাবে, কী কী প্রযুক্তি তাতে ব্যবহার করলে বেশি ফলন ফলানো যাবে, সে সব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

এই প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সর্বভারতীয় সমন্বিত ফল গবেষণা কেন্দ্রের এই প্রকল্পের আধিকারিক ড: দিলীপ কুমার মিশ্র সাহা, অধ্যাপক কল্যাণ চক্রবর্তী, ড: সঞ্জীব দেবনাথ, অধ্যাপক ফটিক কুমার বাউরি, ড: দেবলীনা মাঝি ও ড: অঙ্কিতা রায়।

প্রথম দিন, শুরুতেই বিভিন্ন প্রকারের ফল গাছ ও তাদের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেন ড: কল্যাণ চক্রবর্তী।তিনি বিভিন্ন প্রকারের ফলের গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করেন। ফল গাছের মধ্যে সাথী ফসল কীভাবে চাষ করলে কৃষকদের আয় বাড়ানো যায় সে সম্পর্কেও তিনি আলোচনা করেন।

তারপর ড: বাউরি বলেন, বর্তমান সময়ে ফল চাষ অত্যন্ত লাভজনক একটি পেশা। আমাদের রাজ্য তথা পশ্চিমবঙ্গের মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন হচ্ছেন, আর তাতেই ফল খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সেইজন্য ফল চাষ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করা যেতে পারে।

ড: দেবনাথ বলেন, আমরা ফল চাষের পাশাপাশি ফলের প্রক্রিয়াকরণের উপর জোর দিতে পারি। সেক্ষেত্রে ফলের গুণাগুণ বজায় রেখে বিভিন্ন প্রকারের ফলের প্রক্রিয়াকরণ করে তা বিক্রি করলে বেশ লাভ হতে পারে। আম থেকে আচার, আমসত্ত্ব, কাঁঠালের চিপস, লিচুর পানীয়, বিভিন্ন ফল থেকে বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি করা যেতে পারে।

উদ্ভিদ রোগতত্ত্ববিদ ড: অঙ্কিতা রায় বলেন, বর্তমান সময়ে ফল চাষ করতে গেলে ফসলে রোগ লাগার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ফল গাছ ও ফলে বিভিন্ন পোকা আক্রমণ করতে পারে। তাদের বিনাশ জৈব পদ্ধতিতে করতে হবে। তাহলে সেই ফল খেয়ে মানুষের শরীর সুস্থ থাকবে।

এদিন বিশেষভাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক-মিত্র মিলন খামারিয়া। তিনি বলেন, বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গবেষণা কেন্দ্রের এই প্রশিক্ষণ দ্বারা ফল চাষিরা ভীষণ উপকৃত হচ্ছেন। অনেক মানুষ উন্নত প্রজাতির চারাগাছ থেকে ফল চাষ করে লাভ পেয়েছেন। আমরা চাষিদের মধ্যে এই প্রযুক্তিগুলো ছড়িয়ে দিতে পারছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল গবেষণা কেন্দ্রের আধিকারিকদের প্রচেষ্টায়।

এরপর বাগানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ড: কল্যাণ চক্রবর্তী বিভিন্ন প্রকারের কলম তৈরি হাতে-কলমে শেখান। গুটি কলম, জোর কলম ও কাটা কলমের সাহায্যে চারা তৈরি শেখানো হয়।

দ্বিতীয় দিনে কৃষকদের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। বাগানের বিভিন্ন ফলের গাছ চেনানো হয়। গৌণ ফল চাষ করেও যে অনেক লাভ করা যেতে পারে সে সম্পর্কেও জানানো হয়।

দ্বিতীয় দিন বিশেষ ভাবে উপস্থিত ছিলেন ড: দেবব্রত দাস। তিনি উপস্থিত চাষিদের কলা গাছের পাতা ও কলাগাছ থেকে তন্তু নিষ্কাশন করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানান। এই বিষয় নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় বলেও জানান তিনি। এই তন্তু থেকে পুতুল, খেলনা বা অন্যান্য অনেক শৌখিন জিনিস তৈরি করা যায়।

দু’দিনের এই প্রশিক্ষণ শিবির সম্পর্কে এই প্রকল্পের আধিকারিক দিলীপ কুমার মিশ্র বলেন, “চাষিরাই আমাদের দেশের অন্নদাতা। তারা কৃষি জ্ঞানকে গ্রহণ করে সফল ফলিয়ে মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজ যে চাষিরা উৎসাহী হয়ে এসেছেন তারা আরও বেশি করে উন্নত জাতের চারা লাগিয়ে ফসল ফলাতে পারেন। বেকাররা স্বাবলম্বী হোক, আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়ে উঠুক, তাহলেই আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া সার্থক হবে।”

প্রশিক্ষণ শেষে উপস্থিত চাষিদের হাতে জৈব সার, কীটনাশক, অনুখাদ্য, জার্সি, বিভিন্ন উন্নত প্রজাতির ফলের চারা ও শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *