মিলন খামারিয়া, আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ৭ মার্চ: প্রকৃত অর্থেই তিনি ভূমিপুত্র। তিনি বঙ্গের মাঠে মাঠে ফুল ফোটান, ফলের উদ্যান রচনা করিয়ে দেন। বঙ্গের কৃষিজীবী মানুষের একান্ত বন্ধু তিনি, আপন জন। আদতে তিনি খড়দার ভূমিপুত্র। খড়দাতে তাঁর শিকড় সংস্কৃতি। তিনি কৃষি বিজ্ঞানী এবং সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ, অধ্যাপক ড: কল্যাণ চক্রবর্তী। দোল পূর্ণিমার প্রাক-পর্বে ৬ মার্চ তাঁকে খড়দায় অভিশ্রী কালচারাল ফাউন্ডেশন ও হালদার বাগান সঙ্ঘমিত্র ক্লাবের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত বসন্ত উৎসবে সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করা হয়।
এদিন তাঁকে রহড়ার হালদার বাগান সর্বজনীন দুর্গাপূজার মঞ্চে আহ্বান করেন অভিশ্রী কালচারাল ফাউন্ডেশনের সর্বাধিনায়িকা জয়শ্রী সেনগুপ্তের নেতৃত্বে কালচারাল টিম।
অধ্যাপক চক্রবর্তী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ঋতু কেন্দ্রিক এমন ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমরা যেন যথাসম্ভব প্রকৃতির সামীপ্যে সান্নিধ্যেই থাকি। রাসায়নিক রঙ কিংবা ক্ষতিকর আবীর নয়, ভেষজ রঙ এবং উদ্ভিজ্জ আবীর দিয়েই যেন দোল ও হোলির রঙে সবাইকে রাঙাই। খুব সহজেই এই রঙ নিজের বাড়িতেই তৈরি করে নেওয়া যায়। লটকনের তাজা বীজ, হলুদের কন্দ, পলাশ-গাঁদা-নীলকণ্ঠ ফুলের পাপড়ি থেকে এই আবীর তৈরি করে নেওয়া যায়। এই আবীর ত্বকের ক্ষতি তো করেই না, বরং আমাদের কোমল ত্বক রক্ষা করে। রহড়াবাসী এই ধরনের গাছের চারা বাগিচায় রোপণ করলে সহায়তা করতে তিনি রাজি আছেন বলে জানান। তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আগামী বছর থেকে রহড়া খড়দায় অন্তত ভেষজ আবীরের প্রচলন শুরু হোক এবং পরিবেশ-বান্ধব প্রসাধনীর সামগ্রীর ব্যাপক সম্প্রসারণ হোক৷ সংগঠনের তরফে তাঁকে সম্বর্ধনা জানানোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি লটকনের ভেষজ আবীর নিয়ে প্রদর্শন করেন, এমনকি লটকনের ফলের বীজে থাকা রঙও।
বক্তব্যের শুরুতে তিনি কৃষ্ণমন্ত্র এবং বক্তব্যের শেষে তারক-ব্রহ্ম মহামন্ত্র উচ্চারণ করলে দর্শক শ্রোতামন্ডলীর মধ্যে বিশেষ অনুরণন ধ্বনিত হয়। তিনি বসন্ত সমাগমে ঋতু মাধুর্যের কথা বলেন, আবৃত্তি করেন বিদ্যাপতির একটি পদও। বলেন, আজকাল খড়দার বুকে ন্যাড়াপোড়ার মতো আনন্দ বহ্নি হারিয়ে গেছে, যা তিনি ছোটোবেলাকার খড়দায় দেখেছেন। ন্যাড়াপোড়ার ছড়াও তাঁকে বলতে শোনা যায়। খড়দার বহু নৃত্যশিল্পী, গায়ক-গায়িকা এদিনের অনুষ্ঠানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক উপস্থাপন মঞ্চস্থ করেছেন। অধ্যাপক চক্রবর্তী তা দর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।