(ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান সৌরভ সিং)
তারক ভট্টাচার্য
আমাদের ভারত, ২ জানুয়ারি: আগেই বলেছিলেন, ‘তৃণমূল বেআইনি ভাবে ভাটপাড়া পুরসভা দখল করেছে।’ বৃহস্পতিবার দিনের শেষে দেখা গেল, শেষ হাসিটা হাসলেন অর্জুন সিং। তাঁর ভাইপো সৌরভ সিং-কে অনাস্থার ভোটাভুটিতে তৃণমূল হারালেও, সেই হার খারিজ হয়ে গেল আদালতে। এদিন ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৩০ ডিসেম্বর তৃণমূল কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের নোটিস খারিজ করে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অরিন্দম সিনা। যার জেরে, বৃহস্পতিবার চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়াটাও খারিজ হয়ে গেল।
এদিন দুপুর দুটোর সময় অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত আদালতে প্রশ্ন তোলেন, যেখানে প্রস্তাবের ১৫ দিনের মধ্যে মিটিং ডাকা নিয়ম, সেখানে চেয়ারম্যান কীভাবে ২০ জানুয়ারি অনাস্থা মিটিং ডাকলেন? তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন চেয়ারম্যান সৌরভ সিংয়ের ডাকা অনাস্থা বৈঠক আইন মেনে হয়নি। পাশাপাশি তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন, কোর্টে ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নিজেও মামলা করে আজকের মিটিংকে চ্যালেঞ্জ করেননি। পুরসভার পক্ষের আইনজীবী সাহা রায় বলেন, ‘গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই মূল লক্ষ্য। ৩৫ আসন বিশিষ্ট ভাটপাড়া পৌরসভার ক্ষেত্রেও সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।’
যদিও সৌরভ সিংদের পক্ষের আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘চেয়ারম্যানের নোটিসকে চ্যালেঞ্জ না-করে কীভাবে তিন তৃণমূল কাউন্সিলর নতুন করে মিটিং ডাকলেন?’ কাউন্সিলরদের বদলে সরকার কেন এই মামলা লড়ছে, সেই প্রশ্নও তোলেন বিকাশ ভট্টাচার্য।
এদিন বিকেল ৪টের সময় এই মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, ‘একজন পৌরপ্রতিনিধি ভোট দেওয়ার অধিকারী। সেটা পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনই হোক বা অপসারণ। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার পর নির্বাচিত চেয়ারম্যান একটি মিটিং করবেন সেটা চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে। সেই সময়টাও পেরিয়ে গেলে সে ক্ষেত্রে ভাইস চেয়ারম্যান একটি নোটিশ জারি করতে পারেন। তার মেয়াদ সাত দিন। সেই সময়টাও যদি পার হয়ে যায়, তাহলে তিন জন কাউন্সিলর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারেন। এক্ষেত্রে ১৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে, যা ভাটপাড়া পৌরসভার ক্ষেত্রে হয়েছে।’ এই বিষয়ে একাধিক মামলায় রায়ের উদাহরণ আদালতের কাছে তুলে ধরেন অ্যাডভোকেট জেনারেল।
বিজেপির পক্ষের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, লক্ষ্মী ভার্মা এবং মহারাষ্ট্রের একটি মামলায় একই ঘটনা ঘটেছিল। সেক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়াটা বাতিল করেছিল আদালত। গণতন্ত্রে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সেটা অগ্রাহ্য করে কিছু করা যায় না। মিটিংয়ের জন্য যেহেতু নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তাই সেই সময়ের আগে এই অনাস্থা আনাটা অবৈধ। এরপরই বিচারপতি যাবতীয় পরিস্থিতি বিচার করে অনাস্থার নোটিস খারিজ করে দেন।