আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, বীরভূম, ২৩ অক্টোবর: একে অপরকে তারা আগে দেখেনি। ছিল না পরিচয়ও। চেনা-অচেনার গণ্ডি পেরিয়ে ভাইফোঁটার আসরে অনাথ ভাইদের ফোঁটা দিল বোনেরা। বৃহস্পতিবার বীরভূমের মল্লারপুরের শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রমের উদ্যোগে গণ ভাইফোঁটার আয়োজন হয়েছিল। উৎসবে যোগ দিতে বেলা ১১টার পর থেকেই হাজির হয়েছিল জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অনাথ ও দুঃস্থ শিশুরা।

কুন্ডলা বয়েজ হোম, পুষ্পরাগ মহিলা হোম, রামপুরহাট স্প্যাসটিক সোসাইটি, কারমু – ধারমু মিশন, পূর্বাঞ্চল কল্যাণ আশ্রমের হাত ধরে ফোঁটা নিতে এসেছিল ছোট্ট শান্ত হেমরম, সানাউল শেখ, নয়ন তারা, রেখা পাহাড়িরা। অধিকাংশেরই মা- বাবা নেই। ফলে তাদের ঠাঁই হয়েছে অনাথ আশ্রমে।
মহম্মদবাজারের একটি অনাথ আশ্রমের ছাত্র সানাউল শেখের মঙ্গল কামনায় তার কপালে ফোঁটা দিল দেবস্মিতা মণ্ডল, আদ্য মণ্ডল, মৌসুমি মণ্ডল, দীপান্বিতা মণ্ডলরা। দীপান্বিতার কথায়, “আমরা কেউ কাউকে চিনি না। আশ্রমের টানে আমরা ফোঁটা দিতে ছুটে এসেছি। তবে ফোঁটা দেওয়ার পরই আমরা ভাই- বোনের সম্পর্কে আবদ্ধ হলাম। সারাবছর এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে থাকব।“

ভাইফোঁটার পাতে পায়েস, মিষ্টি পেয়ে বেজায় খুশি সানাউল। সে জানায়, ভাইফোঁটার প্রথা, আনন্দ এস কী, তা জানা ছিল না। এখানে এসে বেশ ভাল লাগছে।
আশ্রমের সভাপতি স্বামী সারদাত্মানন্দ মহারাজ বলেন, “এটা একটা মিলন মেলা। যতদিন পারব এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যাব”।
আশ্রমের সম্পাদক সুকান্ত মণ্ডল বলেন, “আগে বাড়িত্তেই ফোঁটা নিতাম। কিন্তু একই দিনে বিভিন্ন হোমে গিয়ে দেখেছি তাদের কোন ফোঁটা নেই। তারপরেই ১২ বছর আগে গণ ভাইফোঁটার সিদ্ধান্ত নিই। জাতপাতের বেড়া ভাঙতেই এমন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে আসছে। শতাধিক শিশু, কিশোরদের ভাইফোঁটা উপলক্ষে নতুন জামা উপহার দেওয়া হয়েছে। কিশোরীদের চুড়িদার, মায়েদের শাড়ি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেককে স্কুল ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়েছে।’’
শিশুদের আনন্দ দেখে অভিভূত ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও আবুল আলা মাবুদ আনসার। তিনি বলেন, ‘‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক নয়া নজির। শিশুদের কাছ থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত”।
সব মিলিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর অন্য ভাইফোঁটায় মেতে উঠল বেবি, নয়ন, রেখা, শান্ত, নির্মল, সানাউলরা। এদিন সকাল থেকেই শ্রীরামকৃষ্ণ সত্যানন্দ আশ্রমেও ছিল সাজ সাজ রব। দেবস্মিতা, আদ্য, মৌসুমি, দীপান্বিতারা কেউ পরেছে নতুন শাড়ি, কেউ সালোয়ার, ফ্রক, চুড়িদার। মঙ্গলদীপ জ্বালিয়ে, ধান- দূর্বা আর দই-চন্দনের টিপ পরিয়ে দিয়েছে ভাইদের কপালে। সারাদিন হইচই করে কাটায় সকলে। দুপুরে ভেজ কাটলেট, ফ্রাইড রাইস, পঞ্চব্যাঞ্জন রান্না করে খাওয়ানো হয় সকলকে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাঁইথিয়া রামকৃষ্ণ আশ্রমের স্বামী ধ্রুবানন্দ মহারাজ, ময়ূরেশ্বর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ধীরেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশিষ্ট সমাজসেবী অশোক চৌধুরী।
এদিন রামপুরহাট থানার চকমন্ডলা গ্রামে বনবাসী ও জনজাতি সমাজের মধ্যে ভাইফোঁটার আয়োজন করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলা সভাপতি ধ্রব সাহা। সেখানে আদিবাসী রীতি মেনে ফোঁটার ব্যবস্থা করা হয়। ছিল বিশেষ উপহার। ব্যবস্থা করা হয়েছিল পঙ্কতিভোজের।

