পার্থ খাঁড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৩১ জুলাই: বাড়ি থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে পাশের জেলায় উদ্ধার হল এক বিজেপি কর্মীর ঝুলন্ত দেহ, যাকে খুন বলেই দাবি করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির তরফে সরাসরি তৃণমূলের বিরুদ্ধেই খুনের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাকে ঘিরে যথেষ্ট চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে দুই জেলারই সীমান্ত এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মৃত ওই যুবকের নাম সুমন কুমার বর্মন। ৩৬ বছর বয়সী সুমনের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর থানার উত্তরবাড় এলাকায়। শনিবার তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং ব্লকের বুড়াল ১২ নং অঞ্চলের উচিতপুর এলাকায়। ওই এলাকায় একটি গাছ থেকে ঝুলন্ত দেহটি উদ্ধার হয়। তিনি শুধুমাত্র একটি বারমুডা পরে ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ব্যক্তির বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে। তার কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া গেছে। কী করে এবং কেন ওই যুবক এতদূরে এলেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যুবকের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে শুক্রবার একটি মামলার হাজিরা দিতে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক আদালতে গিয়েছিলেন সুমন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ফের বেরিয়ে যান, তারপর আর ঘরে ফেরেননি। শনিবার সকালে তাঁদের সবংয়ের আত্মীয় মারফৎ তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনা জানতে পারে পরিবার। উল্লেখ্য ঘটনাস্থল থেকে আরও কয়েক কিলোমিটার দূরে ওই যুবকের দিদির বাড়ি রয়েছে। সবং থানারই অন্তর্গত মোহাড় এলাকায় অবস্থিত যুবকের দিদির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে শুক্রবার রাতে তাঁদের বাড়িতেও যাননি সুমন।
শনিবার সকালে উচিতপুর এলাকায় উদ্ধার হওয়ার পর স্থানীয় মানুষেরও একটি অংশের দাবি যুবকের দুটি পা-ই প্রায় মাটিতে লেগেছিল, তাই তাঁদেরও অনুমান যে ভাবে ঝুলছিল তাতে এটা আত্মহত্যা নয়, কেউ বা কারা মেরে ঝুলিয়ে দিয়েছে।
বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তন্ময় দাসের দাবী, সুমন ভগবানপুরের সক্রিয় বিজেপি কর্মী ছিল। তাঁকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বিধানসভায় তাঁর লড়াই তৃণমূলকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। ভগবানপুর বিধানসভায় পরাজিত হয় শাসকদল। তারপর থেকেই নানাভাবে হুমকি দেওয়া হত সুমনকে। সুমনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও সাজানো হয়। সেরকমই একটি মামলার জন্য তমলুক গিয়েছিলেন সুমন। তারপর বাড়ি ফিরে নিখোঁজ হয়ে যান। আমাদের মনে হয়েছে সুমনকে খুন করা হয়েছে।”
তন্ময় দাস আরও দাবি করেছেন, “আমরা দেখেছি সুমনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘাড়ে রক্তের দাগও ছিল। শনিবার সকাল থেকেই তৃণমূলের কর্মীরা সুমনের পরিবারের সদস্যদের শাসিয়ে যাচ্ছে কারও বিরুদ্ধে যেন থানায় অভিযোগ দায়ের না করা হয়। আর এর থেকেই পরিষ্কার যে তৃণমূলের গুন্ডারাই সুমনকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে।”
যদিও তৃণমূলের তরফে বলা হয়েছে, স্থানীয় কিছু বিষয় নিয়ে জেরবার ছিলেন সুমন। সুদের কারবার করতেন। বহু মানুষের সর্বনাশ করেছেন ওই কারবার করে। মানুষের চাপে বিপর্যস্ত হয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন সুমন।
সুমনের এক আত্মীয় জানিয়েছেন, সুমনের এক ছেলে দশম শ্রেণিতে পড়ে। সে ইদানিং পড়াশুনা করেছিল না সারাদিন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকত এই নিয়ে সংসারে অশান্তি চলছিল। তারই জেরে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে সুমন।
যদিও বিজেপির দাবি, তৃণমূলের পক্ষ থেকে পরিবারকে চাপে রেখেই এই সব বলানো হচ্ছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছে। আপাততঃ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে।