বাংলা বানান চর্চা ২৭। ন্ড ণ্ড

অশোক সেনগুপ্ত
আমাদের ভারত, ২৭ মে: মারি তো গন্ডার লুঠি তো ভান্ডার।

গন্ডার, ভান্ডার বানানদুটো ঠিক আছে কি? নাকি ভাণ্ডার গণ্ডার? প্রশ্নটায় যে কোনও বঙ্গসন্তানকে ঘাবড়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ঠ। কোথায় ন্ড, আর কোথায় ণ্ড হবে, তা আগ্রহীদের সহজ করে বুঝিয়ে দেওয়ার আর্জি রেখেছিলাম আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন উপ বার্তা সম্পাদক শম্ভু সেনের কাছে।

তিনি জানিয়েছেন, “কোথায় ‘ণ্ড’ হবে আর কোথায় হবে ‘ন্ড’, এটিও নির্ভর করছে শব্দটি কী জাতীয় – অর্থাৎ তৎসম নাকি অ-তৎসম শব্দ তার উপর।
তৎসম শব্দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হচ্ছে সংস্কৃত ণত্ব-বিধান। অর্থাৎ শুধুমাত্র তৎসম শব্দের ক্ষেত্রেই ‘ণ্ড’ হবে – কাণ্ড, কুণ্ড, কুণ্ডলী, খণ্ড, গণ্ড, চণ্ড, চণ্ডী, চণ্ডালী, তণ্ডুল, দণ্ড (এবং দণ্ড দিয়ে যত শব্দ হয় – যেমন দণ্ডাজ্ঞা, দণ্ডনীয়, দণ্ডকারণ্য, দণ্ডাদেশ ইত্যাদি), পণ্ড, পণ্ডশ্রম, পণ্ডিত, প্রচণ্ড, মণ্ডল, মণ্ডলী, মুণ্ড, মুণ্ডপাত ইত্যাদি।

তৎসম নয়, এমন সব শব্দের ক্ষেত্রে অর্থাৎ বাংলা, দেশি, বিদেশি সব শব্দের ক্ষেত্রে ‘ন্ড’ হবে। যেমন – গন্ডার (ভুল করে অনেকেই গণ্ডার লেখেন), ঝান্ডা, ঠান্ডা (ভুল করে অনেকেই ঠাণ্ডা লেখেন), মুন্ডা, মুন্ডারি, কান্ডারি, লন্ডভন্ড, লন্ডন ইত্যাদি।
গণ্ডগোল – এই শব্দটির দু’টি ভাগ – গণ্ড আর গোল। গণ্ড সংস্কৃত শব্দ, বিশেষণ। এর আদত অর্থ হল শ্রেষ্ঠ, প্রধান, অত্যধিক ইত্যাদি। তাই ‘গণ্ডগোল’ শব্দের অর্থ অত্যধিক গোলমাল। এই প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করি – কালে কালে কী ভাবে শব্দের অর্থ পালটে যায়। আমরা অজ পাড়াগাঁ বোঝাতে লিখি গণ্ডগ্রাম। কিন্তু আদতে গণ্ডগ্রাম শব্দের অর্থ হল প্রধান গ্রাম।“

আগামীকাল থাকবে এই বিষয়ে বাড়তি আলোকপাত।
***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *