বাংলা চর্চা ৭৪। ঠাকুর (পদবি) এল যেভাবে

আমাদের ভারত, ১৫ জুলাই: ‘পৌরাণিক শব্দের উৎস ও ক্রমবিবর্তন’-এ ড. মোহাম্মদ আমীন জানিয়েছেন, “বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথের পদবি হিসেবে ‘ঠাকুর’ বহুল পরিচিত একটি শব্দ। শব্দটি ছিল তুর্কি ভাষায় ‘তিগির/ তাগরি’। তুর্কি থেকে এসে শব্দটি সংস্কৃত ও প্রাকৃতে হয়ে যায় ‘ঠক্কুর’। বাংলায় ঠক্কুর থেকে হলো ‘ঠাকুর’। কেউ কেউ মনে করেন শব্দটির মূল উৎস ফারসি।

যাই হোক, তুর্কি/ফারসি উৎসের শব্দ (তু. তাগরি/তিগির =দেবতা); স. ঠক্কুর> ঠাকুর। ঠাকুর কোনো বিশেষ ধর্ম বা সম্প্রদায়গত পদবি নয়। চৌধুরি, মজুমদার, মুস্তাফি প্রভৃতি পদবির মতো ঠাকুর পদবিও মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে ধারণ করতেন। যেমন: কোরেশী মাগন ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, হরিদাস ঠাকুর।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ঠক্কুর থেকে উদ্ভূত ঠাকুর অর্থ (বিশেষ্যে) ভগবান, দেবতা, প্রতীমা, প্রভু, শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি, গুরু, ব্রাহ্মণ, পুরোহিত, পাচক ব্রাহ্মণ, পদবিশেষ। স্ত্রীলিঙ্গে ঠাকুরানি। পদবির চেয়ে অন্যান্য অর্থ বা সম্বোধনে ঠাকুর শব্দটির বহুল ব্যবহার লক্ষণীয়। এক্ষেত্রে শব্দটি হিন্দু সম্প্রদায়ে বহুল প্রচলিত। যেমন, ঠাকুরদা, ঠাকুরমা, ঠাকুর ঘর, ঠাকুরজামাই, ঠাকুরঝি, ঠাকুরদালান, ঠাকুরপূজা, ঠাকুরপো, ঠাকুরমশাই, ঠাকুরাল, বাবুর্চি ঠাকুর, হিন্দু ঠাকুর, মুসলিম ঠাকুর প্রভৃতি।ঠাকুরজামাই তো খুবই পরিচত সম্বোধন: “বলি ও ননদি আর দুমুঠো চাল ফেলে দেয় হাঁড়িতে ঠাকুরজামাই এল বাড়িতে ও ননদি ঠাকুরজামাই এলো বাড়িতে—”। সূত্র: পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি. ***

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *