রাজেন রায়, কলকাতা, ৩০ এপ্রিল: ভিন রাজ্য থেকে ফিরলেই এবার বাংলার সমস্ত শ্রমিক-পড়ুয়া-পর্যটকরা তাদের পরিবারের কাছে পৌঁছতে পারবেন না। তাদের পরিবারের বাসস্থান যদি কনটেনমেন্ট জোনে হয়, তাহলে পরিবারের কাছে পৌঁছনোর আগে অনেকটাই পথ পেরোতে হবে তাদের। বৃহস্পতিবার নবান্নে এমনটাই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।
ইতিমধ্যেই বাংলায় শ্রমিক, পড়ুয়া এবং পর্যটকদের ফেরানো শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে নোডাল বডি গঠন করা থেকে অন্যান্য কী কী করতে হবে, তার সুস্পষ্ট গাইডলাইন তৈরি করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা এই নিয়ে সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সও করেন। তারপরেই এ দিন মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা ঘোষণা করেন, ‘এ রাজ্যে বাইরে থেকে যাঁরাই আসুন, তাঁদের কনটেনমেন্ট জোনে ঢুকতে দেওয়া হবে না।’
মুখ্যসচিবের কথায়, ‘আমরা কেন্দ্রকে বলেছি, এই বিষয়টা নিয়ে তাড়াহুড়ো করলে এত দিন মানুষ যে কষ্ট করে লকডাউন পালন করল, সে সবটাই বিফলে যাবে। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে সবটা করতে হবে, দিল্লির আনন্দ বিহারের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়।’
কিন্তু তাহলে রাজ্যে ঢুকেও যদি নিজের এলাকায় বা বাড়িতে না ফিরতে পারেন, তাহলে এরা সকলে যাবেন কোথায়? নবান্ন জানাচ্ছে, গ্রিন জোন বা অরেঞ্জ-রেড জোনেরও নন কনটেনমেন্ট এলাকা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিছু পরীক্ষার পরেই সেখানে সরাসরি শ্রমিকরা ফিরতে পারেন। কিন্তু রাজ্যে ৪৪৪ টি কন্টেনমেন্ট জোন রয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় এখন কনটেনমেন্ট জোনের সংখ্যা ২৬৪টি, হাওড়ায় ৭২টি এবং উত্তর ২৪ পরগনায় ৭০টি, পূর্ব মেদিনীপুরে ৮ টি। ভিন রাজ্য থেকে আসা এ রাজ্যের মানুষদের যদি এই সমস্ত এলাকায় বাসস্থান হয়, তাহলে তাঁদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে সেক্ষেত্রে তাদের বিকল্প বাসস্থান কোথায় হবে, হাসপাতালের আইসোলেশন না কি সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, তা নিয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি।
তবে মুখ্যসচিব একথা নির্দিষ্ট করে বলেন, ‘আমরা সকলকেই এ রাজ্যে এনে তাদের পরিবারের কাছে দায়িত্ব নিয়ে ফিরিয়ে দেব। কিন্তু দয়া করে কেউ ধৈর্য্য হারাবেন না। আমাদের এক এক জন ধরে ধরে পরিকল্পনা করতে হচ্ছে।’ মহামারী পরিস্থিতিতে হাজার হাজার মানুষ ভিন রাজ্য থেকে ফিরলে তাঁদের যথাযথ তাপমাত্রা পরীক্ষা থেকে করোনা পরীক্ষাও বিশেষ প্রয়োজন। এদের একজনেরও যদি উপসর্গবিহীন করোনা সংক্রমণ থাকে, তাহলে তা উলটে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে। সেই কারণেই ভিন রাজ্যে আটকে থাকা মানুষদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার মানবিক আবেদনে সাড়া দিলেও সমস্ত কিছু বুঝেশুনে ব্যবস্থাপনা করে তবেই এগোতে চান রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা।