আমাদের ভারত, আলিপুরদুয়ার, ১৯ ডিসেম্বর: ভিনরাজ্য থেকে বাঘ আনার আগে আরও এক দফায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে ছাড়া হল ৭৫টি চিতল হরিণ। বনদফতর সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণবঙ্গের বল্লভপুর অভয়ারণ্য থেকে সড়ক পথে হরিণগুলিকে বক্সার জঙ্গলে নিয়ে আসা হয়। নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে গত দুদিনে সবকটিকে গভীর জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আপাতত বনকর্মীদের কড়া নজরে রয়েছে হরিণগুলি। দীর্ঘ যাত্রার ধকল নিয়েও নতুন পরিবেশে অনেকটাই মানিয়ে নিয়েছে প্রাণীগুলি।
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডেরেকটার শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানান, “বল্লভপুর ওয়াইল্ডলাইফ সেনচুরি থেকে প্রথম ধাপে ৭৫টি হরিন নিয়ে এসে সফলভাবে বক্সার জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা হরিনগুলির উপর কড়া নজর রেখেছি।”
উল্লেখ্য, সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতিবেশি রাজ্য আসাম থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বক্সার জঙ্গলে নিয়ে আসা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। বিষয়টিকে মাথায় রেখেই এগোচ্ছে পরিকল্পনা। তবে বাঘ আনার আগে বাঘেদের নিজস্ব এলাকা স্বাভাবিক রাখতে মূলত গত ৫ বছর ধরে “প্রে বেস” নির্মাণের কাজ চলছে বাঘ বনে। যেহেতু বাঘ বাস্তুতন্ত্রে সবচেয়ে উপরে থাকে আর সবথেকে শেষে রয়েছে ঘাষবন। আর জঙ্গলে তৃনভোজিদের অস্তিত্বকে বজায় রাখতে গোটা বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্প জুড়ে ধাপে ধাপে কাজ চলছে। সেইমত বক্সা বাঘবনে কমবেশি ৪০০টি স্পটেড ডিয়ার বা চিতল হরিন ছাড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। আগে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পতে দুই দফায় প্রায় ২০০-র বেশি চিতল হরিণ ছাড়া হয়। এবার ফের আরও ৭৫টি চিতল হরিণ ছাড়া হল।
অসম থকে ছয়টি বাঘ আসার আগে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের খাদ্য শৃঙ্খল আর অনেকটাই শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে। চিতল হরিণদের স্বাভাবিক প্রজনন বিঘ্নিত না হয়, সেই জন্য পুরুষ মাদির ১:৫ অনুপাতে ছাড়া হচ্ছে। এবারেও বাঘবনে সেই অনুপাত বজায় রাখার চেষ্টা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানান,”ভিনরাজ্য থেকে বাঘ আনার প্রক্রিয়াটি জটিল। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। অনেকগুলি বিষয়কে সুনিশ্চিত করতে হবে। তারমধ্যে খাবারের যোগান সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই নতুন করে ধাপে ধাপে চিতল হরিণ বক্সায় ছাড়া হচ্ছে। “উল্লেখ্য, চিতল হরিণ দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। যেকোন অরন্যের পরিবেশে এরা খুব দ্রুত নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। আবার বাঘের খাবার হিসেবেও খুব সহজ টার্গেট হয়ে পড়ে চিতল। আবার রাজ্যের বিভিন্ন সংরক্ষণ কেন্দ্র, অভয়ারণ্যে চিতল হরিণ এর অভাব নেই। সহজেই বহন করে তুলে আনা যায়।স্বাভাবিকভাবেই বাঘের খাদ্য হিসেবে আপাতত চিতল হরিণই প্রথম পছন্দ বনদপ্তরের।
শিলিগুড়ি থেকে ন্যাফের কোয়ার্ডিনেটর অনিমেশ বসু বলেন, বাঘ আসবে ঠিকই, তবে জঙ্গলে খাদ্যশৃঙ্খল ঠিক রাখতেই হবে। সেজন্য ঘাষবন, তৃণভোজি প্রানীদের নিয়ে খাদ্যশৃংখল সাজানোর কাজ চলছে।”