গোপীবল্লভপুরের ঐতিহ্যবাহী বুলবুলি পাখির লড়াইয়ে জয়ী বাজার সাই

অমরজিৎ দে, ঝাড়গ্রাম, ১৫ জানুয়ারি: জঙ্গল মহলে মকর সংক্রান্তিতে প্রাচীন ঐতিহ্য রক্ষা করে হলো বুলবুলি পাখির লড়াই। ওড়িশা- ঝাড়খণ্ড সীমান্ত লাগোয়া সুবর্ণরেখা নদীর উপকূলে অবস্থিত বৈষ্ণব তীর্থ শ্রীপাট গোপীবল্লভপুরের রাধাগোবিন্দ জিউ’য়ের মন্দিরের সামনে চাঁদোয়া টাঙিয়ে ঝাঁ চকচকে বিছানার উপর প্রায় ৪৫০ বছর ধরে হয়ে আসছে এই ঐতিহাসিক বুলবুলি পাখির লড়াই।রক্তপাতহীন এই বুলবুলি পাখির লড়াইতে প্রতি বছরের মতো এবছরও প্রায় শতাধিক বুলবুলি পাখির লড়াই হলো।

উল্লেখ্য, মকর সংক্রান্তি তথা টুসু পরবকে ঘিরে জঙ্গলমহলের বিভিন্ন জায়গায় মোরগ লড়াই হয়ে থাকে। মোরগ লড়াইতে নামানো দুটি মোরগের শরীরে প্রায়ই আঘাত লেগে থাকে। তবে বৈষ্ণব পীঠস্থান শ্রী পাট গোপীবল্লভপুর কোনো মতেই প্রাণীর আঘাত হোক, তা চায় না। তাই প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগে রাধাগোবিন্দ জীউ’য়ের মন্দিরের সামনে শুরু হয় বুলবুলি পাখির লড়াই। এই লড়াইতে নামানো বুলবুলি পাখির কোন ভাবেই ক্ষতি হয় না। এই লড়াই মকর সংক্রান্তির দিন সুবর্ণরেখা নদীতে স্নান সেরে শুরু করেন একে একে হাউরিরা( হাউসি অর্থাৎ যারা বুলবুলি পাখি নিয়ে আসেন তাদের হাউসি বলে)। অপরদিকে সাধারণ মানুষ পিঠে পুলি খেয়ে ভিড় জমিয়েছেন গোপীবল্লভপুরের ঠাকুরবাড়ির রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দিরের সামনে। উদ্দেশ্য একটাই, বুলবুলি পাখির লড়াই দেখা। এখানে বুলবুলি পাখির লড়াই মূলত দুটি সাইকে নিয়ে হয়,(সাই অর্থাৎ পাড়াকে নিয়ে)। বাজার সাই বা পাড়া ও দক্ষিণ সাই বা পাড়া এই খেলার জন্য, হাউসিরা প্রায় একমাস আগে থেকে বুলবুলি পাখি ধরে নিয়ে আসেন। আর তার পরেই রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির প্রাঙ্গনে শুরু হয় বুলবুলি পাখির খেলা।এখনো এই বুলবুলি পাখির লড়াই দেখতে ভিড় জমান পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড ওড়িশা থেকে বহু মানুষজন।বর্তমান যুগে ইন্টারনেট, অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সবার হাতে। সেই যায়গায় ঐতিহাসিক সেই পুরনো স্মৃতি আকড়ে রেখেছে ৮ থেকে ৮০ সকলে।

এ বিষয়ে তপন দেহুরী নামে এক হাউসি বলেন, মকর সংক্রান্তির একমাস আগে থেকে আমরা পাখিগুলি ধরে তাদের ছোটো বাচ্চার মতোন পালন করি। দুধ, কলা, আপেল, আঙুর খাইয়ে তৈরি করি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পাখির সংখ্যা একটু বেড়েছে, আমাদের এই খেলায় পাখির কোনো ক্ষতি হয় না। অপর এক হাউসি স্বরূপ দাস বলেন, প্রাচীন এই বুলবুলি পাখির লড়াইয়ের জন্য আমরা একবছর ধরে অপেক্ষা করে থাকি। এখানে লড়াই বলা হচ্ছে, কিন্তু এই লড়াইতে পাখিদের কোনো রকম ক্ষতি হয় না। এ বছর আমাদের বাজারসাই এই খেলায় জয়লাভ করেছে। আমরা সকলে খুব খুশি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *