আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ২৪ জুন: বিজেপির ডেপুটেশন ঘিরে রণক্ষেত্র পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ভগবানপুর। আমফান ঝড়ের ক্ষতিপূরণ ও জব কার্ড সহ বিভিন্ন ইস্যুতে অনিয়মের অভিযোগে ভগবানপুর বিধানসভা এলাকার তৃণমূল পরিচালিত সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে আজ বিজেপি কর্মীদের ডেপুটেশন কর্মসূচি ছিল।
ডেপুটেশন দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনেই বিজেপি কর্মীদের ওপর হামলা চালায় একদল তৃণমূল কর্মী বলে দাবি বিজেপির। রীতিমত দলীয় ঝান্ডা হাতে স্লোগান দিতে দিতে এই হামলা চালায় ওই তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের ঠেলতে ঠেলতে, ধাক্কা দিতে দিতে ভীমেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত আনে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। এরপর লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। এদিক ওদিক ছুটে পালায় বহু বিজেপি কর্মী। কয়েকজন প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলে তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বেধড়ক মারধর করে তৃণমূল কর্মীরা। এমনকি পুরো ঘটনা ঘটেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের সামনে বলে অভিযোগ বিজেপির। ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মী, তাদের ভগবানপুর গ্রামীণ হাসপাতাল ভর্তি করা হয়। স্থানীয় বিজেপি নেতা স্বপন প্রধান সহ একাধিক বিজেপি কর্মী গুরুতর আহত হওয়ায় তাদের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
স্থানীয় বিজেপি নেতা সুদর্শন মাইতি জানান, তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাদের উপস্থিতিতে ও প্রত্যক্ষ মদতে বিজেপি কর্মীদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। যদিও পুরো ঘটনাকে বিজেপির গোষ্ঠী কোন্দল বলেই দাবি ভগবানপুর ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি মদনমোহন পাত্রের। তিনি বলেন, বিজেপি শান্তিতেই ডেপুটেশন দিয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে কোনও রকম ঝামেলা হয়নি। নিজেদের মধ্যে ঝামেলা ও মারামারি হয়েছে আর দায় চাপানো হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের ওপর।
এদিকে গন্ডগোলের ছবি করতে গেলে তৃণমূল কর্মীদের হাতে আক্রান্ত হন স্থানীয় দুই সাংবাদিক। কিল চড় ঘুষির পাশাপাশি বাঁশ দিয়ে পেটানো হয় তাদের। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের মোবাইল ও ব্যাগ। পরে তৃণমূল নেতৃত্ব ও পুলিশের মধ্যস্থতায় মোবাইল ও ব্যাগ ফিরে পান দুই সাংবাদিক।
আমফান ঝড়ের ক্ষতিপূরণ ও ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে বিগত কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ চড়ছিল ভগবানপুরে। ভগবানপুর বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক অর্ধেন্দুশেখর মাইতির ভাই দীপ্তেন্দু মাইতি সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান। দিন কয়েক আগে তাঁর একটি ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হয় ভগবানপুর এলাকায়। যদিও সে ভিডিও ফুটেজ ভুয়ো বলেই দাবি করে তৃণমূল। তারপর থেকেই উত্তেজনা বাড়ছিল। আজকের এই গন্ডগোলের পর তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যেকার এই উত্তেজনা ভগবানপুর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ল পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে।