শ্রীরূপা চক্রবর্তী, আমাদের ভারত, ১৭ জানুয়ারি: সুকান্ত মজুমদার নেতৃত্বাধীন বঙ্গ বিজেপির লড়াকু মনোভাবের পঞ্চমুখে প্রশংসা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুধু তাই নয়, সারা দেশের বিজেপি নেতাদের সামনে বাংলার কর্মী সমর্থকদের যতই প্রশংসা করা হোক সেটা যথেষ্ট নয়, বলে মন্তব্য করেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে লড়াই করে সংগঠন এবং জনপ্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধির কৃতিত্ব দলের কর্মী সমর্থকদেরই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, বঙ্গ বিজেপির সভাপতির বক্তব্যে হাততালির আওয়াজে গম গম করছিল জাতীয়কর্ম সমিতির বৈঠকের হলের ভিতর। বলা যায় এটা টিম ওয়েস্ট বেঙ্গলকে নিয়ে বাংলা জয়ের দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ সুকান্ত মজুমদারের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের।
দিল্লির এনডিএমসি কনভেনশন সেন্টারের দুদিন ব্যাপী দলের জাতীয়কর্ম সমিতির বৈঠকে প্রথম দিনে বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের মতোই মঞ্চে রাজ্যে দলের পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে উঠেছিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। মূলত বাংলার পরিস্থিতি নিয়েই বলতে শুরু করেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। সূত্রের খবর, সুকান্তের বক্তব্য ছিল ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে, বিশেষত ২ মে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নির্বাচন পরবর্তী হিংসায় বিপর্যস্ত হওয়া দলকে ঘুরে দাঁড় করানোর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। বাংলায় দলীয় কর্মী সমর্থকদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে দল, একের পর এক দলীয় কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে কর্মী সমর্থকরা। একাধিক জায়গায় শাসকদলের বিরুদ্ধে করা আন্দোলনকে সাধারণ মানুষের আন্দোলনে পরিণত করা গেছে বলে উল্লেখ করেন সুকান্ত মজুমদার। এছাড়া দলের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি কোন জায়গায় রয়েছে তার বিবরণও দিয়েছেন রাজ্য সভাপতি।
সূত্রের খবর সুকান্তের বক্তব্য শুরুর প্রায় প্রথম ভাগেই তাকে মাঝপথে থামিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, বাংলায় যেভাবে কার্যকর্তাদের উপর হামলা হয়েছে তা নজিরবিহীন। বাংলার বর্তমান সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই বিচার করতে হবে। ঠিক সেই কারণেই বাংলার কার্যকর্তাদের যতই অভিনন্দন জানানো হোক না কেন তা কম হবে।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দলের সাম্প্রতিক নবান্ন অভিযানে সাফল্য, কীভাবে শাসক দলের হয়ে কাজ করা পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে দলের কর্মীরা লড়াই করেছেন সেই কথা উল্লেখ করেছেন। রাজ্যের মানুষ ধীরে ধীরে তৃণমূল সরকারের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে, শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে, রাজ্যের একাধিক মন্ত্রীর দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়া, ৪ হাজারের বেশি চাকরি বাতিল, চার লাখ জব কার্ড বাতিলের মতো একের পর এক ঘটনায় মানুষ তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে মুক্তি চাইছে বলে উল্লেখ করেন সুকান্ত মজুমদার। একই সঙ্গে তিনি বঙ্গ বিজেপি ত্রয়ী নেতার ( সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষ) নেতৃত্বে পরিকল্পনা মাফিক টিম গঠন করে কিভাবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তার ব্যাখ্যাও দেন।
সূত্রের খবর এদিন বক্তব্য রাখার সময় সুকান্ত মজুমদারের দৃঢ়তায় মুগ্ধ হয়েছে দিল্লি বিজেপি। একসময় অমিত শাহ বলেছিলেন এখনো বিজেপির স্বর্ণযুগ আসেনি। তাঁর কথায় তেলেঙ্গানা, কেরল ও বাংলায় যেদিন বিজেপি ক্ষমতায় আসবে সেদিন বিজেপির স্বর্ণযুগ শুরু হবে। এদিন বক্তব্য রাখার সময় সুকান্ত মজুমদার অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন টিম ওয়েস্ট বেঙ্গল খুব তাড়াতাড়ি বাংলা জয় করে বিজেপির স্বর্ণযুগের সূচনা করে দেবে।
সূত্রের খবর তার এই দৃঢ় বক্তব্যের পর বিজেপির একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলা যায় বঙ্গ বিজেপি সভাপতি এদিন দিল্লি জয় করেছেন। দিলীপ ঘোষের হাত থেকে ব্যাটন যে অত্যন্ত যোগ্য উত্তরসূরীর হাতে গেছে প্রকাশ্যে তার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে। ফলে দলের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে বঙ্গ বিজেপির এই তারুণ্যে ভরপুর নেতার সমালোচনা করার আগে সবাইকেই ভাবতে হবে এবার।
অনেকেই মনে করছেন ঠিক যে যে লক্ষ্যকে সামনে রেখে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের ব্যটন সুকান্ত মজুমদারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই লক্ষ্য সফলতার পথে এগোতে শুরু করেছে। আদি নব্যর ঝুট ঝামেলা সামাল দিয়ে তারুণ্যের উপর ভর করে উত্তর দক্ষিণকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে সর্বোপরি বঙ্গ বিজেপিকে একটি টিমে পরিণত করে কাজ করার সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছেন বালুরঘাটের নিখাদ বাঙালি অধ্যাপক সুকান্ত মজুমদার।