আশিস মণ্ডল, আমাদের ভারত, শান্তিনিকেতন, ১১ মার্চ: মানুষকে সাথে নিয়ে বসন্ত উৎসব হবে, এমন ঐতিহ্য ছিল গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে। কারণ, দোল বা হোলিকা উৎসবের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে বসন্ত উৎসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু উৎসব বাদ দিয়ে বন্দনাতে থেমেছেন বর্তমান বিশ্বভারতী। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ পূর্বজ উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে অনুসরণ করেছেন।
বিশ্বভারতী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে, সোমবার সন্ধে সাতটায় বসন্ত বন্দনা এবং রাত ন’টায় গৌরপ্রাঙ্গনে বৈতালিক হয়। মঙ্গলবার ভোর পাঁচটায় বৈতালিক ও সকাল সাতটায় শোভাযাত্রা হয় গৌরপ্রাঙ্গনে। সন্ধে সাতটায় মঞ্চে বাল্মীকি প্রতিভা অনুষ্ঠিত হবে। উল্লখ্য, নিজেদের মত করে বসন্ত উৎসব পালন করলো বিশ্বভারতী। এদিন প্রথমে খোল দ্বার খোল গান গেয়ে শোভা যাত্রার মধ্যে দিয়ে বসন্ত উৎসবের সূচনা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সহ বিশ্বভারতীর আধিকারিকরা। দোলের দিন বসন্ত উৎসব পালন করবে না, তা আগেই বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কারণ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ শান্তিনিকেতন। তাই ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রক্ষার্থে নানান দিক চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। বিশেষ করে দোলের দিন বিশ্বভারতী প্রাঙ্গনে বসন্ত উৎসব দেখতে হাজির হন লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন তারা। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে বসন্ত উৎসবের সময় বিভিন্ন শিল্পীদের শিল্পকর্মের উপর আবির ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এর ফলে গুণী শিল্পীদের শিল্পকর্ম ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তাই সব দিক বিবেচনা করে বিশ্বভারতী এবার নিজের মতো করেই দোলের আগেই গৌড় প্রাঙ্গনে বসন্ত উৎসব উদযাপন করলো নিজেদের মতো করে।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানাগেছে, কবির বালকপুত্র শমীন্দ্রনাথ ১৯০৭ সালে খেলাচ্ছলে এই ঋতু-উৎসবের সূচনা করেছিলেন। বছরের বাঁধা ধরা একটা দিনে আশ্রমে উৎসব হত এমনটা নয়। ১৯২৩ সালে মাঘী পূর্ণিমায় শান্তিনিকেতনে বসন্ত উসব পালিত হয়। ফাল্গুনী পূর্ণিমায় আশ্রম-সম্মিলনীর অধিবেশনে আবারও আয়োজন করা হয়েছিল বসন্ত-বন্দনার। সে বারই শ্রীপঞ্চমীর দিনও আম্রকুঞ্জের সভায় বসেছিল উৎসবের আসর। তাই নির্দিষ্ট দিনে হবে তাও যেমন ঠিক ছিল না, তেমনি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়াও হয়। ১৯৮২ সালে বসন্ত উৎসব স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন তদান্তীন উপাচার্য অম্লান দত্ত। পরে অবশ্য নিয়ম রক্ষার বসন্ত উৎসব পালিত হয়।