Barun, Sutia, বিচার মেলেনি সুটিয়া গণধ*র্ষণের প্রতিবাদী মুখ বরুণের, আজ যেন গোটা রাজ্য খুঁজছে তাকেই

সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৬ জুলাই: সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে আজও যেন শিউরে ওঠেন এলাকার মহিলারা। নজরে পড়লেই এলাকার মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা মাঠে, আমবাগানে ঘেরা সুখ সাধুর আখড়ায় করা হত গণধর্ষণ। একসময়ের সেই সুটিয়াতেই মহিলাদের গণধর্ষণের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। প্রতিবাদ জানিয়েছিল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। টানাপোড়েনে কিছু নেতা মন্ত্রীর নাম উঠে আসে। তারপরে দুষ্কৃতীদের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারাতে হয়েছিল বরুণকে।

দিনটা ছিল ৫ জুলাই,২০১২, সন্ধ্যে তখন ৭.২০। কর্মব্যস্ত মানুষের ঘরে ফেরার তাগিদ। দেখতে দেখতে লোকারণ্য হয়ে উঠল গোবরডাঙা স্টেশন চত্বর। ভীড়ের মাঝে ট্রেন থেকে নেমে ১নং প্ল্যাটফর্মের বাইরের গাছতলায় রাখা মোটরবাইকের দিকে এগিয়ে চলেছেন বছর ৩৯- এর এক যুবক। সেই সময় হঠাৎ দুষ্কৃতীদের ছোঁড়া গুলি বিঁধল তাঁর বুকে। সাদা শার্টটা রক্তে লাল হয়ে গেল। প্রচণ্ড যন্ত্রনায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন যুবক। কোনমতে নিজেকে টানতে টানতে স্টেশনের সিড়ি পর্যন্ত নিয়ে এলেন। চারিদিকে তখন ভীড় জমিয়েছে হাজারো গৃহমুখী মানুষ, ঠিক যেন কোনকিছু উপভোগ করার উদ্দেশ্যে। কেউ কেউ বলতে লাগল, এ তো বুকে গুলি লেগেছে, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আবার কেউ কেউ বলতে লাগল, এ তো পুলিশ কেস। যুবকের রক্তে লাল হয়ে গেল স্টেশন চত্বরটা। প্রায় ৩০ মিনিট পর যেন ঘুম ভাঙল দর্শকদের। হাবড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা হল। কিন্তু… পথেই সব শেষ।

সেদিনের সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে দোষীরা সাজা পেলেও, আজও প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাস খুনে জামিনে মুক্ত অভিযুক্তরা। আক্ষেপের সুর বরুণ বিশ্বাসের পরিবারের গলায়। এক যুগ কেটে গেলেও বিচারাধীন সেই মামলা। এখনও বরুণ বিশ্বাস হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাসের বাবার। দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে আদালতে গেলেও নেওয়া হয় না সাক্ষ্য বলে দাবি পরিবারের।

সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আর জি কর কাণ্ড নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, ভাইকে হারিয়ে প্রতিবাদে গর্জে ওঠা বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমিলা বিশ্বাস আজও যেন সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এই নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়। বরুণ থাকলে সে-ও আজ নারীদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদ করত। তাঁর কথায়, ‘সুটিয়া গণধর্ষণের পরও রাজ্যে কামদুনি, গেদে, বর্ধমান, কাকদ্বীপ-সহ একাধিক জায়গায় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেও তার বিচার মেলেনি’। প্রশাসনের একাংশ জড়িত থাকায়, তাদের আড়াল করতেই তদন্তের গতি ঘোরানো হয় বলেও অভিযোগ তোলেন বরুণের দিদি। সুটিয়া ছুঁয়ে যাওয়া গোবরডাঙা-বেড়ী- গোপালপুর রাস্তার বিশ্বাস বাড়ি স্টপেজে আজও বিচারের অপেক্ষায় হাসিমুখে চেয়ে আছে সকলের মাস্টার দা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *