Rain, Bankura, বৃষ্টি কমায় স্বস্তিতে বাঁকুড়াবাসী, জলে ডুবে প্রাণ গেল ২ জনের

আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১১ জুলাই: বাঁকুড়ায় শুক্রবার বৃষ্টি না হওয়ায় জেলাজুড়ে স্বস্তির হাওয়া।যদিও জেলায় এদিন দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অধিক বৃষ্টির কারণে নদী, জোড়, খাল, বিল জলে পরিপূর্ণ। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা। ঘটছে মৃত্যু। বাঁকুড়া শহরের পাটপুর পাওয়ার হাউস সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীতে শৌচকর্ম সারতে গিয়ে জলের তোড়ে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে সুব্রত বন্দোপাধ্যায় (৬৫) নামে স্থানীয় এক বাসিন্দার।

অপরদিকে কোতুলপুরের লাউগ্রামে ২২ বছরের এক যুবকের দেহ ও মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয় সিমডাল এলাকার এক নয়ানজুলি থেকে।গ্রামবাসীদের প্রাথমিক ধারণা বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জলে ডুবে থাকা রাস্তার অবস্থা বুঝতে না পেরে নয়ানজুলিতে পড়ে মারা যায়। গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে।

গত জুন মাসের মাঝামাঝি সময় জেলায় ঢোকে বর্ষা। সেই সময় ভারী বৃষ্টিতে বানভাসি হয়েছিল জেলার বিভিন্ন এলাকা। জেলার অনেক কাঁচা মাটির ঘর ভেঙ্গে পড়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ডুবে গিয়েছিল। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছিল অনেক পরিবারকে। শিবিরে খাবার না পেয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বানভাসীরা। মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষার জন্য ত্রাণ, ত্রিপলের দাবিতে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। পরিস্থিতি এতটাই জটিল হয়ে উঠেছিল যে রাজ্যের মন্ত্রীদের পরিদর্শনে আসতে হয়। সেই ঘটনার এক মাস যেতে না যেতেই, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের টানা বৃষ্টিতে ফের বানভাসি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয় জেলায়।

গত রবিবার রাত থেকে লাগাতার বৃষ্টিতে জেলার অধিকাংশ নদীর জলস্তর বাড়তে থাকে। নদীগুলির জল বইতে শুরু করে বিপদসীমা ছুঁয়ে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জলস্তর দ্রুত বাড়তে থাকে। একাধিক কজওয়ে বা সেতু সম্পূর্ণ ডুবে যায়। এতে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়েন জেলাবাসী। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া দ্বারকেশ্বর নদের মীনাপুর কজওয়ে ও কেঞ্জাকুড়ার কাছে সঞ্জীবনীঘাটের কজওয়ে, ভাদুল কজওয়ে জলে ডুবে যায়। সোনামুখীর কাছে শালী নদী বইতে থাকে দুকূল ছাপিয়ে। শালী নদীর জলে বৃহস্পতিবার ডুবে যায় সোনামুখীর ধানসিমলা থেকে কাশীপুর যাওয়ার রাস্তা। সড়কের ওপর হাঁটুসমান উচ্চতায় জল বইতে থাকে। এতে রাস্তাটি দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এতে সোনামুখীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শ্যামনগর, কুণ্ডপুষ্করিণী ও কাশীপুর-সহ পাঁচ ছটি গ্রামের। শিলাবতী নদীর জলস্তর বাড়ায় পাথরডাঙ্গা সেতু ডুবে যায়।এতে বাঁকুড়া, লক্ষ্মীসাগর ভায়া মাচাতোড়া রাস্তায় যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।বোদাই নদীর জলস্তর বাড়ায় পাত্রসায়ের ব্লকের রামপুরের ভাসাপুল ভেসে যায়। এতে পাত্রসায়েরের নারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বারাসত, রামপুর নতুন বাজার, কাঁঠালঘাটা, মুড়েপাড়া, দেউলপাড়া-সহ প্রায় দশটি গ্রামের।

স্থানীয়দের দাবি, বোদাইয়ের জলে এখন ভাসাপুল ভেসেছে। নিম্নচাপ ঝাড়খণ্ডের দিকে সরে যাওয়ায় বৃষ্টির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। জেলাবাসীদের আশঙ্কা ছিল যে, শুক্রবারে বৃষ্টি হলে নদীর জল আশপাশের গ্রামে ঢুকে পড়বে। তবে এবার স্থানীয় প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী সতর্ক ছিল। শুক্রবার এসব জায়গায় দেখা যায় গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বস্তির হওয়া। শুক্রবার ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় তারা খুশি।

বেলগড়িয়াবাসীদের বক্তব্য, নতুন করে শুক্রবার বৃষ্টি না হওয়ায় তারা স্বস্তিতে রয়েছেন। লাগাতার বৃষ্টিতে জরাজীর্ণ বেলগড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষ, ছাদের চাঙড় ভেঙ্গে পডতে শুরু করেছে।ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। তারা সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় ছিলেন। অভিভাবকদের বক্তব্য, জেলায় এমন অনেক স্কুল রয়েছে। বিভিন্ন রাস্তা জলে ডুবে থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছিল। বৃষ্টি বন্ধ হওয়ায় আপাতত স্বস্তিতে বাঁকুড়াবাসী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *