মনসা পূজায় মেতেছে বাঁকুড়া

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৭ আগস্ট: মনসা পূজায় মেতে উঠেছে বাঁকুড়া। বাঁকুড়া শহরের প্রাচীন মহল্লগুলি ছাড়াও গ্রামাঞ্চলেও মনসা পূজার ব্যাপক আয়োজন। দেখা যায় তপশিলি প্রধান এলাকায় মনসা পূজার প্রচলন বেশি।

শহরের তপশিলি জাতির বসবাস রয়েছে রাসতলার সন্নিহিত তেলিগড়‍্যা, নামো গোপীনাথপুর, লালবাজার, পালিতবাগান, কুচকুচিয়া, রামপুর, শিখরিয়াপাড়া, মোলডুবকা প্রভৃতি এলাকায়। আর এই সব এলাকাতেই রয়েছে প্রাচীন মনসা মন্দির ও থান।স্হানীয় ভাষায় মন্দির সংলগ্ন স্থানকে “থান” বলে উল্লেখ করা হয়। এই সব মন্দিরে মনসা মূর্তি কিছু নেই, রয়েছে পোড়ামাটির মনসার ঝাড়। সর্প বেষ্টিত দেবীর মূর্তি। চারপাশে নানা দেব দেবীর মূর্তি। থরে থরে সাজানো এই কাঠামোকে ঝাড় বলা হয়।ঝাড়ের নীচে পোড়ামাটির হাতি ঘোড়া। যদিও অধূনা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনসা মাটির মূর্তিতে পূজিত হচ্ছেন।

পুরাতত্ববিদ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মনসা মূলতঃ লোকদেবী। গাছ পাথর ইত্যাদিকে পূজা করা হয়।বৌদ্ধ ও জৈন দেবী মনসাতে রূপান্তরিত হয়েছেন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মত যে সব স্হানে জৈন ধর্মের প্রাদুর্ভাব ছিল জৈন ধর্ম অবলুপ্তির পর সেই সব স্হানে জৈন দেবী মনসা দেবীতে রূপান্তরিত হয়েছেন। বস্তুত পক্ষে বাংলায় মনসা পূজার প্রচলন রয়েছে লোকদেবী হিসেবে। গাছ পাথর মাটির ঘটে নিরাকার রূপে পূজিতা। কোথাও মূর্তি নেই কিন্তু বর্তমানে মনসা মূর্তি তৈরি করে পূজা হচ্ছে।

বাঁকুড়া শহরের রাসতলা তেলিগড়‍্যা, পালিতবাগান, কুচকুচিয়া, রামপুর, শিখড়িয়া পাড়া সহ শহরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা মনসা মন্দিরে ঘটা করে পূজার আয়োজন করা হয়। এই সব এলাকায় বাহারি আলোকসজ্জা, প‍্যান্ডেল দুর্গাপূজাকে মনে করিয়ে দেবে। তেলিগড়‍্যা, রামপুর, শিখড়িয়া পাড়ার মনসা পূজা প্রাচীন।রানীগঞ্জ মোড়ের মনসা পূজা প্রাচীন পূজাগুলির অন্যতম। ১৭৭২ সালে এই মনসা পূজার সূচনাকাল।প্রমথনাথ চট্টোপাধ্যায় মন্দিরের জমি দান করেন। প্রাচীন মন্দির সংস্কার করে বর্তমানে সেখানে গড়ে উঠেছে সুদৃশ্য মন্দির। ঝাঁ চকচকে মন্দিরে শুশুনিয়া পাহাড়ের পাথর দিয়ে তৈরী মনসার ঝাড় দেবী মূর্তি হিসাবে পূজিতা। সর্প বেষ্টিত পোড়ামাটির ঘটের পাশাপাশি ঐ একই আদলে রূপার ও পিতলের ঘট ও স্হান পেয়েছে।

অন্যতম উদ্যোক্তা সুদেব নন্দী জানান, স্হানীয় অধিবাসীরা এই পূজোর আয়োজন করেন। প্রাচীন কাল থেকেই এভাবেই পূজো হয়ে আসছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *