SIR, Bankura, এসআইআর নিয়ে তেতে উঠেছে বাঁকুড়া! খুশি বিজেপি, সক্রিয় শাসক তৃণমূল, সতর্ক প্রশাসন

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৫ নভেম্বর: মঙ্গলবার থেকে এসআইআর- এর কাজ শুরু হতেই বাঁকুড়া জেলা তেতে উঠেছে। নির্বাচন দপ্তর জেলায় এসআইআর- এর কাজ সুষ্ঠু ভাবে করতে সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে। এদিন সকাল থেকে বিএলও অফিসারদের বাড়ি বাড়ি যেতে ও ফর্ম বিলি করতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে হাতে ফর্ম তুলে দিতে এবং কিভাবে পূরণ করতে হবে, তা বুঝিয়ে দিতে দেখা যায়। তবে অনেক জায়গাতেই
বিএলও’দের সঙ্গে তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের থাকতে দেখা গেছে।

প্রথম থেকে এসআইআর নিয়ে সব থেকে বেশি সরব শাসক দল ও তাদের নেতা, কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা। এসআইআর নিয়ে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেখান থেকে ব্লক কার্যালয়গুলির সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছে। মঙ্গলবার একথা জানান দলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। এদিন ইন্দপুরের গৌরবাজার অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের একটি সভা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন অঞ্চল নেতৃত্ব, বুথ সভাপতি, জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন স্তরের দলীয় কর্মীরা। এই সভায় মূলত এসআইআর নিয়ে আলোচনা হয়। প্রত্যেককেই এসআইআর নিয়ে সরব হতে শোনা যায়। এই বৈঠকে ইন্দপুর ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রেজাউল খান‌ এসআইআ- এর মাধ্যমে বৈধ ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার “চক্রান্ত” করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে সরব হন এবং তা মোকাবিলা করতে দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন। এদিনই বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাঁটিতে অঞ্চল তৃণমূলের পক্ষ থেকে এসআইআর সহায়তা কেন্দ্র খোলা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলোক মুখার্জি ও দলের গঙ্গাজলঘাঁটি অঞ্চল সভাপতি সহ অন্যান্য তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা।

প্রত্যেককেই এসআইআর- এ বৈধ ভোটারদের নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ করতে এবং দলীয় কর্মীদের সতর্ক থাকতে বলা হয়। এদিনই বাঁকুড়ার জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে তৃণমূলের পক্ষে বাঁকুড়া এক নম্বর ব্লকের বিএলওদের
এসআইআর- এ করণীয় কী তা নিয়ে দলীয় ভাবে প্রশিক্ষণ সভার আয়োজন করেছিল। সেই সভায় প্রশিক্ষণ শুরুর বেশ কিছুটা পর সভায় ঢোকেন বাঁকুড়া পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রাজু লোহার। তা দেখে বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী বিরূপ মন্তব্য করেন।যা নিয়ে সভায় চাঞ্চল্য দেখা যায়।

উল্লেখ্য, এসআইআর নিয়ে সক্রিয় তৃণমূল। ইতিপূর্বে ছাতনা, ইন্দপুর, শালতোড়ায় বাংলার ভোট রক্ষা কর্মসূচি শিরোনামে দলীয় বিএলও’দের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়। তবে এসআইআর নিয়ে বিরোধী দল বিজেপি খুশি। এমনকি এসআইআর- এ কাজ জেলায় শুরু হওয়ায় তাদের লাড্ডু বিতরণ করা হয়।

উল্লেখ্য, এসআইআর নিয়ে বিধানসভা ভিত্তিক সর্বদলীয় বৈঠক করেন বাঁকুড়ার মহকুমা শাসক। সর্বদলীয় এই বৈঠকে বিজেপির পক্ষ থেকে এসআইআর এ নিযুক্ত বিএলওদের তালিকা ও তাদের সম্পর্কে বিশদ তথ্য চাওয়া হয় প্রশাসনের কাছে। অন্যদিকে সিপিএম-এর প্রভাতকুসুম রায় এসআইআর নিয়ে কীভাবে কী করতে হবে, কত বার বিএলও-রা যাবেন, তা সকলকে জানানোর দাবি জানান। গত ২০০২ সালের ভোটার লিস্টটার কপি সব দলকে দেওয়ার দাবি জানান। তবে যে প্রক্রিয়ায় করার কথা, সেটা সঠিকভাবে পালিত হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয় বলেও জানান। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধি জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় প্রকৃত ভোটাদের এক জনেরও নাম বাদ দেওয়া যাবে না বলে সরব হন।

এ প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, এনিয়ে প্রথম থেকেই সরব তৃণমূল। বাঁকুড়ার তৃণমূল সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী দলীয় নেতা ও কর্মীদের বিএলও-দের কাজে হস্তক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়ে বিতর্কের ঝড় তোলেন। তিনি বলেন, বিএলও’রা গ্রামে গেলে তৃণমূল কর্মীরা তার সঙ্গে যান। গ্রামে কোনও ব্যক্তি অনুপস্থিত থাকলে তার ফর্ম নিয়ে আপনারা পূরণ করে জমা দিন। গ্রামে- গ্রামে, পাড়ায়- পাড়ায় নাগরিক কমিটি গঠন করে নাম বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।

সিমলাপালে দলীয় বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে অরূপবাবু দাবি করেন যে, সারা রাজ্যে এসআইআর-এর নামে এক কোটি মানুষের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। তা রুখতে সংঘবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক জায়গায় বিএলও কর্মীরা গ্রামে গেলে তার সঙ্গে দলের বুথ স্তরের কর্মীদের যেতে হবে। গ্রামের একটি নামও যাতে বাদ না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কেউ অনুপস্থিত থাকলে তাঁর ফর্ম নিয়ে দলীয় কর্মীদেরই পূরণ করে বিএলও’র কাছে জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *