সোমট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৯ ফেব্রুয়ারি: নববিবাহিতা স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা ও প্রমাণ লোপাটের জন্য মাটিতে পুঁতে দেওয়ার ঘটনায় স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেন বাঁকুড়া দায়রা আদালতের বিচারপতি মনোজিত ভট্টাচার্য।
ঘটনার বিবরণে জানাগেছে, গত ২০১৪ সালে বাঁকুড়া সদর থানার আশ্রম পাড়ার পূজা বাউরির সাথে বর্ধমান জেলার বেন্না গ্ৰামের মুলুক চাঁদ সেনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই পূজার উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। তার ফলে পূজা বাপের বাড়ি চলে আসে। এরপর বাঁকুড়ায় এসে ৭/৪/১৫ তারিখে মুলুক চাঁদ পূজাকে বর্ধমান নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর থেকে পূজার কোনও খবর পায়নি পূজার বাবা- মা। তখন তারা মেয়ের খোঁজ নিতে বর্ধমানের বেন্না গ্ৰামে যায়। সেখানে মুলুক চাঁদ জানায় যে, ঐ দিনই পূজাকে শেয়ারাবাজারে ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়া হয় বাঁকুড়া যাওয়ার জন্য। কিন্তু পূজার খোঁজ মেলেনি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করেও কোনও সন্ধান না পেয়ে পূজার বাবা কালো বাউরি গত ১৭/৪/১৭ তারিখে বাঁকুড়া সদর মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৩৬৫/৩৬৩ ধারায় মুলুক চাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ মুলুকের খোঁজে গেলে সে আত্মগোপন করে।পুলিশ তার বাবা ও মা’কে গ্ৰেপ্তার করে। দীর্ঘ দু’ বছর ধরে মুলুকের সন্ধান চালিয়ে ২৮/৭/১৭ তারিখে পুলিশ তাকে গ্ৰেপ্তার করে। পুলিশের জেরায় সে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাড়ির অদূরে মাঠে পুঁতে দেয় বলে স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ পুঁতে দেওয়া পূজার দেহ উদ্ধারে নামে।কিন্তু আসামির কথা মতো গিয়ে দেখা যায় সেখানে বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। মুলুকের কথার ভিত্তিতে বাড়ির এক স্হানে খোড়াখুড়ি করে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করে। সেখানে হাতের নোয়া ও শাঁখা ইত্যাদি দেখে পূজার বাড়ির লোকজন কঙ্কালটি পূজার বলে সনাক্ত করে। তারপর কঙ্কালটির ময়নাতদন্তের ও ডিএনএ পরীক্ষায় কঙ্কালটি মহিলার বলে প্রমাণিত হয়।
এই মামলায় সরকারি আইনজীবী অতনু দে জানান, মহিলা থানার বর্ণালী সরকার তদন্ত শেষে চার্জশিট পেশ করেন। দীর্ঘ বিচারপর্ব শেষে বাঁকুড়া দায়রা আদালতের বিচারপতি মনোজিত ভট্টাচার্য আসামি মুলুক চাঁদকে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২/৩০১ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছ’মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। প্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে পাঁচ বছরের জেল ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

