অশোক সেনগুপ্ত, আমাদের ভারত, ২২ জুলাই: বাংলাদেশ অগ্নিগর্ভ। নজর রাখছে ভারত। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট রায়ের পর অনেকের আশা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। এই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, বিরোধীরাও কি সহজে হাত গুটিয়ে নেবেন? সুতারাং, অতঃ কিম? এর পর কী হবে? সময়ই তার উত্তর দেবে।
দীর্ঘকাল ধরে কর্মসূত্রে ভারত সরকারের হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় করার দায়িত্বে রত অর্থনীতির অধ্যাপক, রিসার্চ অ্যান্ড ইনফর্মেশন সিস্টেম ফর ডেভলপিং কান্ট্রিজ-এর ডঃ প্রবীর দে। তাঁর ব্যক্তিগত মতামত শুনলেন অশোক সেনগুপ্ত।
১) বাংলাদেশে অবাধ রাজনীতির প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেশ কিছুকাল ধরে বিতর্ক উঠেছে। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর আরোপিত শর্ত খারিজ করে দেন শেখ হাসিনা। বিষয়টা সম্পর্কে আপনার কী মতামত?
উঃ— এটা পুরোটাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শর্ত শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী হাসিনা খারিজ করেননি, দেশের মানুষজনও সেটা খারিজ করে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরো বেশি ভাবে বাস্তববাদী ভূমিকা নেওয়ার দরকার ছিলো। এটা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের আয়ের বৈষম্য অনেক বেশি। দেশের প্রগতি দেশের মধ্যে অনেক অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তার উপর করোনা পরবর্তীকালে বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, ইত্যাদি প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দরকার এইসব বিষয়ে যুক্ত হওয়ার। কৌশলগত প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে এমন কিছুই করার দরকার নেই যাতে বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
২) ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বরাবরই যথেষ্ঠ ভাল। একাধিক বৃহৎ শক্তি উপমহাদেশে ক্ষমতা বিস্তারের লক্ষ্যে ওই সম্পর্কে চিড় ধরাতে চাইছে। ভারত কীভাবে এর মোকাবিলা করছে?
উঃ— ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক খুবই মজবুত। সম্পর্কের উন্নতি চোখ পড়ার মত। অংশীদারিত্বকে সম্প্রসারিত করা হয়েছে সম্পর্কের সমস্ত মাত্রা কভার করার জন্য। ভারত বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ বাজারে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। শুধু স্বাধীনতা নয়, ভারত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগী। অন্য দেশ কোনো ভাবেই সেই জায়গাটা নিতে পারবে না।
৩) বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা কি কোনওভাবে শেখ হাসিনার পায়ের তলার মাটি নরম করে দিল?
উঃ— হতে পারে এতে বিরোধী পক্ষের সুবিধা হল যাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে দেখা যেত না। বিএনপি-জামাত এটাই চাইছিল। এটাও ঠিক আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছে। একধরনের অ্যান্টি ইনকাম্বেন্সি ফোর্স মানুষের মধ্যে দেখা দেয়। বাংলাদেশ সরকার একটা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে না রাখলে, পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। যাই হোক, এটা ছাত্র আন্দোলন নয়। রাজনৈতিক আন্দোলন এটার দখল নিয়েছে।
৪) তসলিমা নাসরিন দাবি করেছেন বাংলাদেশ জেহাদিস্থান হবে। আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
উঃ— দুটো আলাদা ভাবে দেখতে হবে। জিহাদি শক্তি বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় মুছতে চায়। সেটাই করে চলেছে বিগত কয়েক দশক ধরে। এই আন্দোলনে ঢুকে এই জিহাদি শক্তি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্যকে হাইজ্যাক করে এক ভারত বিরোধী এবং হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে।
৫) ভারত-বাংলাদেশ কতটা পরস্পরের পরিপূরক?
উঃ— উভয়ই একে অপরের পরিপূরক।বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমেই সঠিক উত্তর দিতে হবে। ভারতবর্ষ এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের প্রগতি বাংলাদেশের উন্নতির প্রভাবক। একইভাবে বাংলাদেশের উত্থান ভারতের জন্য ভালো। একে অপরের পরিপূরক। বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের সংহতিকে শক্তিশালী করতে আমরা চাই বাংলাদেশ শক্তিশালী ভূমিকা পালন করুক।
৬) সামাজিক মাধ্যমে বাংলাদেশে অত্যাধিক ভারত-বিরোধী প্রচারের মাত্রা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর কারণ কী?
উঃ— সামাজিক মাধ্যমে আবার বাংলাদেশ বিরোধী প্রচার প্রচুর। আমি পশ্চিমবঙ্গের আদি ও মূল বাঙালি। চাকরি সূত্রে দিল্লীতে থাকি। এখানের কিছু নোংরা উত্তর ভারতীয় আমাকে বাংলাদেশী বলে। আসলে জাতিগত বৈষম্য খুবই গভীরে আর সেগুলোই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটে।