পিন্টু কুন্ডু, বালুরঘাট, ১৬ জানুয়ারি: ঘোষণা না হলেও কার্যত নিশ্চিত বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রধান তিন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থী তালিকা। ইতিবাচক সুর দলের প্রথম সারির নেতৃত্বদের গলাতেও; যা নিয়ে এখন জোর চর্চা বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে। ২০১৯ এ এই লোকসভা কেন্দ্র থেকে রাজ্যের শাসকদল তথা তৃণমূল প্রার্থী অর্পিতা ঘোষকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে সাংসদ নির্বাচিত হন বিজেপি প্রার্থী সুকান্ত মজুমদার। তারপর থেকে একের পর এক পদোন্নতি ঘটেছে সুকান্তর। বর্তমানে রাজ্য সভাপতি হিসাবেও দলের দায়িত্বভার পালন করছেন তিনি। ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে তাকেই ফের প্রার্থী করা হচ্ছে, এ নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই খোদ দলের অন্দরেও। যার সবুজ সংকেত মিলতেই ঘর গোছানো শুরু করেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা বিজেপি। ছোট ছোট সভা, ঘরোয়া বৈঠক এসবে জোর দিয়ে বুথ পর্যায় থেকে সংগঠন সাজাতে মাঠে নেমে পড়েছে এই লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপির নেতা কর্মীরা।
অন্যদিকে, রাজের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ফলাফল গত লোকসভা নির্বাচনে আশানুরূপ না হওয়ায় অনেক আগে থেকেই এই কেন্দ্রে কৌশল বদলাবার প্রক্রিয়ায় জোর দিয়েছে তৃণমূল। যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করে ইতিমধ্যে পুরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই কেন্দ্রে কার্যত বিরোধীদের ধরাশায়ী করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এবারে লোকসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন কায়দায় রণ কৌশল সাজাতে দলের পুরনো যোদ্ধাকেই এই কেন্দ্রে বেছে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। যে হিসেবে ইতিমধ্যে বেশকিছু সংগঠনিক রদবদলও ঘটেছে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে। শুধু তাই নয়, জয়ের জন্য তৃণমূল কংগ্রেস একাধিক পন্থা অবলম্বন করছে। সেই হিসাবে একাধিক প্রার্থীর নামও তৃণমূল সামনে এনেছে। তবে হেরে যাওয়া আসন ছিনিয়ে নিতে এবারে যে সংগঠনের উপরই ভরসা রাখছে দল তার কিছুটা ইঙ্গিত মিলেছে খোদ দলের জেলা গলাতেও। কর্মীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা, মান্যতাকারী ও পুরনো মুখ হিসাবে জেলায় বিপ্লব মিত্রের যে কোন বিকল্প নেই তাও স্বীকার করেছেন তৃণমূল জেলা সভাপতি। যে সবের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে বিপ্লব মিত্র’কেই এবারে প্রার্থী হিসাবে এগিয়ে রেখেছেন তৃণমূলের নেতা কর্মীরা।০ কর্মীদের বিচারকে প্রাধান্য দিয়েই এই কেন্দ্রে এবারে প্রার্থী মনোনয়ন করছে তৃণমূল, বলেও দলীয় সুত্রের খবর।
এদিকে একসময়ের শক্ত ঘাটিতে তৃণমূল ও বিজেপির দাপাদাপি স্তব্ধ করতে পিছিয়ে নেই বামফ্রন্টও। বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রটি বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে ইতিমধ্যে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তারাও। দলীয় সুত্রের খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যে এই আসনের জন্য পেশায় শিক্ষক ও সাংগঠনিক মুখ কল্যান ব্যানার্জিকে প্রার্থী হিসাবে তুলে এনেছে আরএসপি দল। নব্বইয়ের দশক থেকে যুব সংগঠনের সাথে জড়িত থাকা ব্যক্তিকে তুলে এনে এবারের নির্বাচনে যে শাসকদল তৃণমূল ও বিজেপিকে যথেষ্টই বেগ দিতে চলেছে বামফ্রন্ট তা কার্যত মেনে নিয়েছেন অনেকেই।
এব্যাপারে আর এসপি নেতা কল্যান ব্যানার্জি প্রার্থী হিসাবে একজনের নামও শুনেছেন। কিন্তু কে তিনি তা এখনও জানেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত দল ঘোষণা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল জানিয়েছেন, দলের সবচেয়ে পুরনো মুখ ও সকলেই যাকে মান্যতা দেয় তিনি একমাত্র বিপ্লব মিত্র। তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি প্রার্থী হলে দলে কোন বিশৃঙ্খলা বা গ্রুপবাজি বলে কিছুই থাকবে না। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত দল কারো নাম ঘোষণা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত এব্যাপারে চুড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।
বিজেপির জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরী জানিয়েছেন, সুকান্ত মজুমদারই যে প্রার্থী হবেন তা তারাও একপ্রকার নিশ্চিত। তবে এব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা দিল্লি নেবে।

