বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য, করণদিঘিতে সুধানী নদীতে ডুবে প্রাণ গেল একই পরিবারের ৩ শিশুর

স্বরূপ দত্ত, আমাদের ভারত, উত্তর দিনাজপুর, ২৫ মে: বালি মাফিয়াদের বালি তোলার কারণে নদীর জলে ডুবে মৃত্যু হল একই পরিবারের ৩ শিশুর। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলার করণদিঘি থানার অন্তর্গত দো-মোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম চৌনাগারা গ্রামে সুধানী নদীতে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মৃত ৩ শিশু সম্পর্কে ভাই বোন। তাদের নাম রোজিনা খাতুন (৯), তাসিনা খাতুন (৭) এবং মহঃ রিজুয়ান (৪)। তাদের বাড়ি দো-মোহনা গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিম চৌনাগারা গ্রামে।

স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ি থেকে খানিক দূরে সুধানী নদীতে স্নান করতে যায় ৪ শিশু। তাদের মধ্যে ৩ ভাই বোন ও ১ প্রতিবেশী শিশু ছিল। সেখানেই ৩ ভাইবোনের মেজো বোন নদীর হাঁটু জলে নেমে আচমকাই গভীর জলে তলিয়ে যায়। কোলে তাদের ছোট ভাইকে নিয়েই বড় বোন তাকে বাঁচাতে গেলে তারাও তলিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা দেখতে পেয়ে তাদের তড়িঘড়ি উদ্ধার করে করণদিঘি গ্রামীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাদের মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে ময়নাতদন্ত না করে মৃতদেহ ৩টি নিয়ে বাড়িতেই চলে যান পরিজনেরা। তবে অগভীর সুধানী নদীতে এই মরশুমে হাঁটুজল থাকার কথা, সেখানে কিভাবে আচমকা গভীর জলে ডুবে গেলো ওই ৩ শিশু? এনিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, অবৈধভাবে ওই নদী থেকে লাগাতার বালি তোলার কারবার চালাচ্ছে বালি মাফিয়ারা। যে কারণে অগভীর নদীর যেখানে সেখানে বড়বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। আর সে কারণেই এই মৃত্যুর ঘটনা বলে দাবি স্থানীয়দের। তবে শুধু অভিযোগই নয়, ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে সেই চিত্র। জেসিবি বা ট্র‍্যাক্টরের টায়ারের ছাপ আছে এখনও। এমনকি নদীর বুক থেকে সদ্য তোলা বালি এখনো পাড়ে মজুত করে রাখা হয়েছে। লাগাতার বালি মাফিয়াদের কারবারের জেরে নদী জায়গায় জায়গায় অত্যন্ত গভীর হয়ে যাওয়াতেই এই দুর্ঘটনা বলে দাবি এলাকাবাসীদের।

তবে এনিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রীতিমত ভয় পাচ্ছেন এলাকাবাসীরা। এমনকি মৃতদের পরিবারের লোকেরাও এনিয়ে কিছু বলতে নারাজ। মাফিয়াদের দৌরাত্ম্যে কার্যত ভয়ে কাঁপছে গোটা গ্রাম।

এদিকে সংবাদমাধ্যম এলাকায় পৌছে ঘটনাস্থলের চিত্র তুলে ধরতেই করণদিঘি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছোয়। এরপর এদিন বিকেল নাগাদ মৃতদেহগুলি বাড়ি থেকে তুলে করণদিঘি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেইসঙ্গে ময়না তদন্তের জন্য দেহগুলি রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *