করোনা আতঙ্কে ৫ হাসপাতাল ঘুরেও অক্সিজেনের অভাবে রাস্তাতেই মৃত্যু শিশুর

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ৩ এপ্রিল: করোনা আতঙ্কে যে এভাবে একরত্তি শিশুকে বলি হতে হবে, তা ভাবেনি তার পরিবার। কিন্তু কঠোর বাস্তবে এমন পরিস্থিতিরই শিকার হতে হল তাকে। বিন্দুমাত্র করোনা আক্রান্ত না হয়েও ৫ হাসপাতাল ঘুরেও শিশুটির জন্য চিকিৎসার বন্দোবস্ত করতে পারল না তার পরিবার। সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত শহরের ৫টি হাসপাতাল রাজপথেই অক্সিজেনের অভাবে থেমে গেল সেই শিশুর জীবন।

মর্মান্তিক এই ঘটনার জন্য শিশুটির মৃত্যুর জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে ৫টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও। জানা গিয়েছে, বাটানগরের বাসিন্দা শরফুদ্দিন খানের আড়াই মাসের নাতি নিউমোনিয়ায় ভুগছিল। প্রথমে সে শিশুমঙ্গল হাসপাতালে ভর্তি ছিল। কিন্তু বুধবার শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে তাকে রেফার করা হয় এসএসকেএম হাসপাতালে। শিশুটি করোনায় আক্রান্ত কি না তা দেখার জন্য তার লালারসের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়।

এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে শরফুদ্দিন এবং শিশুটির মা ও বাবা রওনা দেন এসএসকেএম হাসপাতালের পথে। কিন্তু সেখানে পৌঁছে তাঁরা জানতে পারেন সেখানে বেড নেই, তাই ভর্তি নেওয়া যাবে না। সেখান থেকে এরপর তাঁদের পাঠানো হয় ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। কিন্তু সেখানেও বেডের অভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সেখান থেকে তাঁরা আসেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেও ঠাঁই হয়নি তাঁদের। এরপর ফের ফিরে আসেন এসএসকেএমে। কিন্তু তখনও বেড না থাকায় সেখানেও ভর্তি করাতে পারেননি। এরপর শিশুটিকে নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দ্বারস্থ হয় পরিবার। কিন্তু সেখানে পৌঁছে শিশুটিকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, অক্সিজেনের অভাবে রাস্তাতেই সে মারা গিয়েছে।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার করে বলে দিয়েছেন কোন রোগীকে রেফার করা যাবে না সেখানে করোনা মহামারীর সময়ে নিছক বেডের অভাব নাকি দায় এড়ানো মনোভাব, কি কারনে শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হল না, সেই নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত এই নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা কোনও কথা বলতে চাননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *