আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ২ অক্টোবর: গান্ধীজির জন্মদিনে ফের বিস্ফোরক অভিযোগ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের। রাজ্যপালের সরাসরি অভিযোগ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। তিনি ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাটে অভিযোগের সুরে বলেন, “রাজভবনকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনীয় অর্থ ও কর্মী পাঠিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে না। যদি কেউ ভেবে থাকে এভাবে রাজ্যের সাংবিধানিক পদকে দুর্বল করে দেওয়া যাবে, সে ভুল ভাবছে।
রাজ্যপাল বলেন, আমি জনসেবক, জনগণের কাছে নত হয়ে কাজ করি। তবে কখনই তাদের কাছে নত হই না যারা ভাবছে রাজভবনকে দুর্বল করে দেবে।” রাজ্যপালের এই মন্তব্য রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। শুধু এখানেই থেমে থাকেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। ফের একবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলাকে কাঠগড়ায় তুলে রাজ্য প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করলেন রাজ্যপাল। গান্ধীজীর ১৫১ তম জন্মদিবসে উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর গান্ধীঘাটে গান্ধীজীর স্মৃতিসৌধে মাল্যদান করতে এসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ রাজ্য রাজনীতিকে স্যানেটাইজ করার কথা বলেন।
এদিন ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাটে এসে রাজ্যপাল রাম রাজত্বের উদাহরন টেনে বলেন, “আমরা রাম রাজ্যের মত সুখী রাজ্যের পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু এখানে রাজনৈতিক হিংসা হানাহানি চলছে। বোমার ফ্যাক্টরি চলছে। অবিলম্বে এই হিংসা বন্ধ হওয়া উচিত।”
কেন্দ্রের কৃষি প্রকল্পের পক্ষে সওয়াল করেন বলেন, “আজ লালবাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মদিবস। তিনি “জয় জওয়ান, জয় কিষান” শ্লোগান দিয়েছিলেন। আমি কৃষক পরিবারের ছেলে, আমার হৃদয় কৃষকদের জন্য কাঁদে। আমার ভীষন কষ্ট হয়, যখন অনুভব করি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারনে এরাজ্যের কৃষকদের প্রাপ্য টাকা থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ রাজ্যের কৃষকদের ১২ হাজার কোটি টাকা আটকে দেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক কারনে। গরিব কৃষকদের নিয়ে রাজনীতি বন্ধ হোক। কেন্দ্রীয় সরকারের কৃষক প্রকল্পের ১২ হাজার কোটি টাকা সরাসরি কৃষকদের পাওনা, সেই টাকা বাংলার কৃষকরা পাচ্ছে না।”
রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, “রাজভবনে প্রয়োজনীয় কর্মী ও অর্থ ঠিকমত পাঠানো হচ্ছে না। এভাবে একটা সাংবিধানিক পরিকাঠামোকে দুর্বল করা যাবে না। আমি রাজ্যের প্রথম সেবক। আমি সংবিধানের কাছে মাথা নত করতে পারি, তবে যারা আমাকে দুর্বল করতে চায়, তারা ভুল ভাবছেন। ওরা সংবিধানকে অপমান করছে, রাজভবনকে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা করছে, তবে ওরা সফল হবে না।”
অন্যদিকে এদিন গান্ধীঘাটে উপস্থিত রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু রাজ্যপালকে “নৈরাজ্যপাল” বলে পাল্টা কটাক্ষ করেন। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ও রাজ্যপাল এদিন একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সামনেই ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাটে রাজ্যপাল রাজ্যের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ করেন। এরপর রাজ্যপালের পাল্টা বলেন ব্রাত্য বসু। তিনি বলেন, “রাজ্যপাল অনৈতিক কথা বলছেন। রাজ্যপাল কেন উত্তর প্রদেশের হাথরাসের বিষয় নিয়ে কিছু বলছেন না? উনি জানেন ওখানকার জেলা শাসক কি করেছেন? এখানেও তো কামদুনির ঘটনা সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল। তবে এখানকার জেলাশাসক কি যোগীর রাজ্যের মত নির্যাতিতার পরিবারের বিরুদ্ধে ছিল? বিজেপি দুটি সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী, খুন আর নারী নির্যাতন। ওই সংস্কৃতি বাংলায় চলবে না। যেভাবে প্রশাসন সম্পর্কে রাজ্যপাল কথা বলছেন, তার কোন ভিত্তি নেই। উনি যা বলছেন তাতে উনার নামের আগে নৈ বসলে ভুল হবে না। উনি বিজেপির মুখপত্র হিসেবে কথা বললেন।”
এদিন ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাটে অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল, মন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক চৈতালী চক্রবর্তী, ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় এদিন ব্যারাকপুর গান্ধী ঘাটে গান্ধী জন্ম দিবস পালিত হয়।