ড. কল্যাণ চক্রবর্তী
আমাদের ভারত, ১২ ফেব্রুয়ারি: কোন বাঁধই আর ঠেকানো যাচ্ছে না। যে দলের পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসা কেবল সময়ের অপেক্ষা, সেই দল সম্পর্কে সামান্য জ্ঞাতব্য তথ্য পরিবেশনের জন্যই এই প্রতিবেদন।
সারা বিশ্বের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দলের শিরোপা যে দলের মাথায়, সেই দল অর্থাৎ ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি বা ভাজপা দলের জন্ম ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ‘জনসঙ্ঘ’, যার নেতৃত্বে ছিলেন ভারতকেশরী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি, তারই উত্তরাধিকার পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ‘জরুরি অবস্থা’ নামক গণতান্ত্রিক অমাবস্যার কালোদিনে স্বৈরাচারী ইন্দিরা গান্ধীকে পরাস্ত করতে, সমবেত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ১৯৭৭ সালে জনসঙ্ঘের বিলোপ সাধন হয়। তৈরি হয় জনতা দল, তাতে নানান দলের সংযুক্তি। সে এক ঐতিহাসিক ঘটনাবহুল দিনপঞ্জি বটে! ভোটযুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস পরাজিত হল। কিন্তু সময় যেতে না যেতেই পূর্বতন জনসঙ্ঘের বিরুদ্ধে শুরু হয়ে গেল চক্রান্ত। মাথা নোয়ালেন না রাষ্ট্রপ্রেমিক অটলবিহারী বাজপেয়ী। ক্ষমতা ছেড়ে বেরিয়ে এলেন জনসঙ্ঘের কার্যকর্তারা। পদ্মফুল ফুটলো নতুন করে, তৈরি হল নতুন দল, সৌকর্যে প্রকাশিত হল ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’।
ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাস এক নতুন ও ঐশীখাতে বইতে শুরু করলো। বিজেপি দল মাত্র দুটি আসনে জয়লাভ করে ১৯৮৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর পথ চলা শুরু করল। অন্য সদস্যরা সংসদে হাসাহাসি করতো। সংসদে দাঁড়িয়ে বাজপেয়ীজী তাদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন, আজ আপনারা যে দলের সংখ্যা নিয়ে ব্যাঙ্গবিদ্রূপ করছেন, একদিন সংখ্যার অমোঘ সত্যে তারই বিপ্রতীপ আপনাদের লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
বাজপেয়ীজীর বাণী ঋত-সত্য হয়েছে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই দলটিই একক ভাবে পেয়েছে ৩০৩টি আসন। তারাই এখন ভারতবর্ষ পরিচালনা করছে।
এবার দেখে নেওয়া যাক এই দল কী অসীম শক্তিতে এগিয়েছে– এগিয়েছে আপন লক্ষ্যে। জাতীয়তাবাদ, রাষ্ট্রীয় একতা, গণতন্ত্র ও বিকেন্দ্রিত অর্থনীতিতে দলের দায়বদ্ধতা বজায় রেখে। মিথ্যে ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষতার বাতাবরণ আর মূল্যবোধের রাজনীতিকে দলের আদর্শ করে। রাজনৈতিক আঙিনায় দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ স্থানে রেখেছে এই দল। রাষ্ট্রের সুরক্ষায় কোনো আপোষ চলে না, তা বারে বারে প্রমাণ করেছে তারা। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতিকে ছুঁড়ে ফেলার কৃতিত্বও এই দলের৷ কারণ এই দল প্রতিষ্ঠিত একাত্ম মানবতাবাদের উজ্জ্বল উদ্ধারে। প্রাচীন ভারতের ঐতিহ্যময় জীবনচর্যা ও মানসচর্চা দলের ভিতকে শক্তি দিয়েছে। সমষ্টির মধ্যে ব্যক্তির সার্বিক বিকাশই দলের মূলসুর। ধর্ম যা কর্তব্যের এক অপরূপ প্রকাশ; ধর্ম যা পশুত্বকে ছাপিয়ে মনুষ্যত্বে উত্তীর্ণ করে এবং তারও ঊর্ধ্বে অন্তর্নিহিত দেবত্বকে প্রকাশ করার আয়োজন রয়েছে, তারই অনবদ্য ভূমিকায় ব্যষ্টি ও সমষ্টির বিকাশ সম্ভব–বিশ্বাস করে এই দল।
১৯৮৪ সালে যে দলের দুইজন সাংসদ ছিল, ১৯৮৯ সালের নির্বাচনে সেই বিজেপি ৮৯ টি আসন লাভ করে সকলকে চমকে দিয়েছিল। তারপর শুধু চমকের পর চমক। ১৯৯১ সালে এই দল পেলো ১২০টি আসন। ১৯৯৬ সালে এই দলের হাতে ছিল ১৬১ জন সাংসদের শক্তি। বিজেপির ক্রমাগত শক্তি বৃদ্ধিতে ভয় পেয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যথাসাধ্য আটকাতে শুরু করলেও শেষ রক্ষা হল না। ১৯৯৬ সালের ১৩ দিনের সরকার এবং ১৯৯৮ সালে ১৩ মাসের সরকারের পর ১৯৯৯ সালে এলো পূর্ণ সময়ের বিজেপির মন্ত্রিসভা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ২৮২ টি আসন পেলো এই দল, একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে দেশের নেতৃত্বে এলেন নরেন্দ্র দামোদর মোদী। ২০১৯-এর নির্বাচনেও বিজেপির প্রত্যাশিত ও ব্যাপক জয় দেখেছে বিশ্ব।
দেশের অধিকাংশ রাজ্য আজ বিজেপি শাসিত। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ২০১৬ সাল থেকেই প্রধান প্রতিপক্ষ, মানুষ আজ উপলব্ধি করেছে। বাম শাসনে এবং পরবর্তী শাসনের শত চেষ্টাতেও এ দলকে রোখা যায়নি। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয় নির্মমভাবে। মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মারধর করা হয়। মানুষ তার যোগ্য জবাব দেবার জন্য তৈরি হল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই দলকে ১৮টি আসন উপহার দিয়ে মানুষ বুঝিয়ে দিল, রাজনীতিতে এই নোংরামি তারা মেনে নেবে না।
বিশ্বের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই দল আজ এক অনন্য নাম, অনন্য তার অগ্রগতি। কোনো দলের আজ ক্ষমতা নেই এই দলকে পশ্চিমবঙ্গে আটকায়। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী এই দলের সম্পদ ছিলেন, মানুষ ভুলে যায়নি। এই দলেই নানান গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাপৃত ছিলেন লালকৃষ্ণ আদবানী, ড. মুরলী মনোহর যোশী, কুশাভাউ ঠাকরে, সুন্দর সিং ভাণ্ডারী– মানুষ তাও মনে রেখেছে।
বর্তমানে এক রাষ্ট্রনেতা যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, সমগ্র ভারতবাসীর সঙ্গে রাজ্যবাসীও পর্যবেক্ষণ করেছে। “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস”এই দলের নির্ভেজাল স্লোগান, তা বিশ্বাস করেছে সংখ্যালঘু মানুষ। উন্নয়নই মূল চালিকাশক্তি এই দলের। ভোটব্যাঙ্ক বানিয়ে রাখার প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে, তাই ভারতীয় জনতা পার্টির জয়রথ এগিয়ে আসছে। আসছে, আসছে, আসছে ……। বাংলার মানুষ অধীর আগ্রহে শঙ্খধ্বনি দিয়ে এই দলকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।