সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৭ সেপ্টেম্বর: খড়ের সাহায্যে মনিষীদের পোট্রেট তৈরীর অসামান্য শিল্পী বিশ্বরূপ কর্মকার বঙ্গ গৌরব সম্মানে ভূষিত হলেন। বাঁকুড়া জেলার বড়জোড়া থানার মালিয়াড়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বরূপ কর্মকার। খড় দিয়ে দেশ বিদেশের বিভিন্ন মনিষী ও সেলিব্রিটিদের পোট্রেট নির্মাণ করে তিনি এক অভিনব শিল্প ধারার জন্ম দিয়েছেন। সেই কারণেই তাঁকে ওয়ার্ল্ড বুক অফ স্টার রেকর্ডস বঙ্গ গৌরব সম্মান দিয়ে এই কাজকে মৌলিকতার স্বীকৃতি প্রদান করলেন।
এর আগে ২০২১ সালে তিনি খড় দিয়ে রামকৃষ্ণ, স্বামীজি, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজী সহ ভারতীয় মনিষীদের প্রতিকৃতি তৈরী করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তখনই তাঁকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইন্ডিয়া বুক অব রেকর্ডসে নথিভুক্ত করেন। এরপর তিনি অনুপ্রাণিত হয়ে দেশ বিদেশের অসংখ্য মনিষী ও সেলিব্রেটিদের প্রতিকৃতি আঁকেন ধান গাছের শুকনো খড় দিয়ে। তার দক্ষ এবং নিপুনতার নমুনা পেয়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ইউনিভার্সিটি সাম্মানিক ডক্টরেট উপাধি দেয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে পান ইন্টার ন্যাশনাল বুক অব রেকর্ডস পুরস্কার। চলতি বছরেই বিশ্বরূপ কর্মকার লন্ডন ওয়ার্ল্ড বুক অব রেকর্ডস পুরস্কার পান।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রবিবার কলকাতার তাজ হোটেলে তাকে বঙ্গ গৌরব সম্মান তুলে দেন ভারত রত্ন প্রাপক নবারুণ চ্যাটার্জি ও ওয়ার্ল্ড বুক অব স্টার রেকর্ডসের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শান্তশ্রী ভট্টাচার্য।
আয়কর বিভাগের কর্মী বিশ্বরূপ কর্মকার একজন শিল্পীই নন তিনি একজন জাতীয় স্তরের বডি বিল্ডার্স। এই বিভাগেও তিনি জেলা স্তর থেকে জাতীয় স্তরে গিয়ে স্বর্ণপদক পেয়ে বাঁকুড়া তথা বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন। সুন্দর হস্তাক্ষরের অধিকারী বিশ্বরূপ একজন ভালো কবিও। শিল্পচর্চার পাশাপাশি তিনি ভালো কবিতাও লেখেন।
বিশ্বরূপ কর্মকার বলেন, দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় তিনি যেসব প্রতিযোগীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছেন তার থেকেও কঠিন এই খড়ের কাজ দিয়ে টিকে থাকা। কারণ এখানে তার সামনে কোনো কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে যেতে হচ্ছে।
খড়ের কাজে ধৈর্য্য আর দক্ষতার সঙ্গে মেহনতের প্রয়োজন। কারণ খড়ের কাজে তিনি কোনো রং ব্যবহার করেন না। তাই ধান কাটার পর ভালো শক্ত খড় সংগ্রহ করে তার ডাঁটি ভালো করে ঝেড়ে নিয়ে সকালের হালকা রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। তারপর রাতে শিশির খাওয়ানো, জল ছিটিয়ে ফের রোদ খাওয়ানো ইত্যাদি নানা প্রসেসের খড়ের মধ্যে নানা রং ফুটে ওঠে। এরপর সেই খড় সুক্ষ্ম ছুরি দিয়ে চিরে হালকা আয়রন করতে হয়। তারপর কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে কেটে কাজে লাগাতে হয় প্রয়োজন মত।