আমাদের ভারত, পূর্ব মেদিনীপুর, ৯ ফেব্রুয়ারি: দু’দিন আত্মগোপন করে থাকার পর অবশেষে বন্দুক সহ থানায় আত্মসমর্পণ করতে এসে গ্রেপ্তার হলেন শহীদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা তৃণমূলের নেতা দিবাকর জানা।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিককে মারধরের অভিযোগের প্রধান অভিযুক্ত শহীদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানা। রবিবার দুপুর বারোটা নাগাদ কোলাঘাট থানায় গিয়ে তিনি নিজের থেকেই আত্মসমর্পণ করতে যান। সেখানেই কোলাঘাট থানার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ধৃতকে তমলুক জেলা আদালতে পেশ করা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ ফেব্রুয়ারি অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক সেরে বেরোনোর সময় গেটে নিরাপত্তারক্ষী অফিসারদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন দিবাকার জানা। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা রক্ষী ও হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ ঘোষ কে মারধরের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অস্থায়ী শ্রমিকদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক মিটিং করার জন্য সেদিন তিনি প্লেন্টের ভেতরে ঢুকে ছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী নিরাপত্তারক্ষীরা তার নিজস্ব গাড়ি চেকিং করতে এলে বচসা শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে। অভিযোগ তখনই তিনি এবং তার দলীয় কর্মীরা কর্তব্যরত সরকারি
আধিকারিকদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। তারপরই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তী একদা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ দোর্দন্ড প্রতাপ তৃণমূল নেতা শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানার বিরুদ্ধে কোলাঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই সঙ্গে ওই দিনই জেলাশাসক পার্থ ঘোষ তার কাছে থাকা লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুকের লাইসেন্স ক্যানসেল করেন এবং দ্রুত তা থানায় জমা করার নির্দেশ দেন। যদিও বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি এলাকাছাড়া ছিলেন। আজ দুপুর নাগাদ তিনি কোলাঘাট থানায় আত্মসমর্পণ করতে আসেন। পুলিশ জানিয়েছে তার বিরুদ্ধেসরকারি কাজে বাধা, কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে মারধর, সরকারি সম্পত্তি ভাংচুরসহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আজ তাকে তমলুক জেলা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
আদালতে ঢোকার মুখে দিবাকর জানিয়েছেন, কোন কারনে আমার লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুকটির অনুমোদন বাতিল করা হয়েছে। তাই সেটি আইনগত ভাবে আমার জমা দেওয়া উচিত যে কারণেই আমি বন্দুক সহ আত্মসমর্পণ করতে আসি। ১৯৯৮ সালের আগে থেকে তৃণমূল কংগ্রেস দলের সাথে আমি যুক্ত হয়ে বহু মানুষের উপকার করেছি। দলকে আমি এখনো ভালবাসি ভবিষ্যতে দলের জন্য পেছন থেকেই আমি কাজ করে যাব। সেই সঙ্গে তিনি বলেন অতীতেও শুভেন্দু অধিকারী আমার নেতা ছিলেন ভবিষ্যতেও থাকবেন। কোন রাজনৈতিক কারণ ছাড়াই আমি আজ আত্মসমর্পণ করতে আসি। আদালত থেকে বেরোনোর সময় তিনি জানিয়েছেন গন্ডগোলের দিন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিকরা আমার কলার ধরে ছিলেন। আমি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হওয়ায় আমার অনুগামীরা উত্তেজিত হয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
দিবাকর জানাকে গ্রেপ্তার করলেও পুলিশের হাতে এখনো অধরা বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা। শান্তিপুর এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সেলিম আলী ও এলাকার তৃণমূল নেতা অসিত চক্রবর্তী এখনো অধরা। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কোলাঘাট থানায় দিবাকর জানা আত্মসমর্পণ করতে আসে। তার লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুকটি জমা করেছে। আজ তাকে তমলুক জেলা আদালতে তোলা হচ্ছে। অধরা বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে জেলাজুড়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। সেইসঙ্গে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তার কারণে একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী সফিউর আলি খান জানিয়েছেন, দিবাকর জানার বিরুদ্ধে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধিকারিকদের মারধরের ঘটনায় যে অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তার প্রথম আসামি ছিলেন। তাই তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আজ আদালতে তোলেন। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।