রায়গঞ্জের মৃৎশিল্পী অর্পিতা পাল

স্বরূপ দত্ত, উত্তর দিনাজপুর, ১১ অক্টোবর: সংসারের বোঝা টানতে মৃন্ময়ীর মূর্তি তৈরি করে চলেছেন রায়গঞ্জের কুমোরটুলি কাঞ্চনপল্লীর প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী গণেশ পালের বিধবা স্ত্রী অর্পিতা। তাঁর হাতের কাজে আর তুলির ছোঁয়ায় রায়গঞ্জ শহরের বিগ বাজেটের পুজো মন্ডপে শোভা পায়। একাধারে সংসারের সমস্ত কাজ ও হেঁসেল সামলে ফুটিয়ে তুলছেন মৃন্ময়ীর অসাধারণ রূপ। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা আর সংসার চালাচ্ছেন স্বামীর হাত ধরে শেখা প্রতিমা গড়েই। উত্তর দিনাজপুর জেলার অন্যতম সেরা মৃৎশিল্পীদের মধ্যে আজ একজন অর্পিতা পাল।

আর পাঁচটা শিল্পীর ঘরের মেয়েরা যেমন টুকটাক সাহায্য করে থাকে, তেমনিই সুভাষগঞ্জের বাপের বাড়িতে থেকে বাবার সাথে কাজে হাত লাগাতেন অর্পিতা পাল। তারপর ১৯৯৪ সালে বিয়ে হয় রায়গঞ্জের কুমোরটুলি কাঞ্চনপল্লীর প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী গণেশ পালের সাথে। শ্বশুরবাড়ি এসে স্বামীর কাজে সহযোগিতা হাত বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু কে জানত এই টুকটাক সাহায্য করাই তাঁর একমাত্র জীবিকা হয়ে উঠবে। সংসারের বোঝা টানতে এটাই হবে তাঁর একমাত্র অবলম্বন! স্বামী আচমকাই ২০১৫ সালে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল অর্পিতার। ছেলে মেয়ে নিয়ে কিভাবে সংসার প্রতিপালন করবেন তিনি। অথৈ জলে পড়ে গিয়েও মনের অদম্য সাহস আর স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাকে পাথেয় করে জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন বছর চল্লিশের অর্পিতা। নামলেন পারিবারিক পেশায়। কদামাটি ছেনে রঙ তুলির ছোঁয়ায় শুরু করলেন প্রতিমা নির্মানের কাজ। প্রথমে ছোট ছোট প্রতিমা তৈরি করে তা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। এখন দশভূজার মূর্তির অন্যতম নির্মাতা অর্পিতা দেবী।

মা দুর্গা দশহাতে অস্ত্র নিয়ে যেমন ধরিত্রীর রক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তেমনিই দশভুজা রূপেই সংসারের সমস্ত কাজ সামলে মৃন্ময়ীর মূর্তি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন রায়গঞ্জ শহরের কাঞ্চনপ্ললীর দলভূজা অর্পিতা দেবী। সংসার প্রতিপালন করার পাশাপাশি মেয়ের বিয়ে দেওয়া এমনকি ছেলেকে কলকাতায় উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াতেও পাঠিয়েছেন। স্বামীর আশীর্বাদ আর মা দূর্গার হাত ধরে আজ অর্পিতা দেবী রায়গঞ্জের কুমোরটুলির একজন স্বনামধন্য মৃৎশিল্পী। তাঁর হাতের তৈরি দূর্গা প্রতিমা আজ বিরাজ করছে রায়গঞ্জ শহর তথা উত্তরবঙ্গের বিগ বাজেটের পূজো মন্ডপে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *