সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৩ জুন: ভালো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে চায় মাধ্যমিকে সম্ভাব্য প্রথম অর্ণব গরাই।
দু’দিন আগে বাঁকুড়ায় এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। সতীঘাটের জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, “বাঁকুড়ার ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত ট্যালেন্টেড, প্রতিবছর মাধ্যমিক- উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম হয়। তাই বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছি।” সেদিন মুখ্যমন্ত্রী পরীক্ষার্থীদের আগাম শুভেচ্ছাও জানিয়েছিলেন। ফল প্রকাশ হতেই দেখা গেল ২০২২ সালেও মুখ্যমন্ত্রীকে সেরা উপহার দিল বাঁকুড়া। এবার সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে গঙ্গাজলঘাঁটি ব্লকের রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের ছাত্র অর্ণব গরাই। যদিও সে বর্ধমানের রৌনক মণ্ডলের সঙ্গে যুগ্মভাবে রাজ্য সেরার মুকুট মাথায় পরেছে, তবুও আলাদা ভাবে কৃতিত্ব দিতে হয় একেবারে সাধারণ পরিবারের এবং অখ্যাত গ্রামের ছেলে অর্ণবকে।
বাবা জগন্নাথ গরাই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক আর মা ছবিদেবী আদ্যন্ত গৃহবধূ। অর্ণবদের বাড়ি গঙ্গাজলঘাঁটি থানারই বড়জোড়া বিধানসভার আসনচুয়া গ্রামে। জঙ্গলের ভিতর ছবির মত সাজানো গ্রামে বুনোফুলের সৌরভ ছড়িয়ে অর্ণব যে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখল তাকে কুর্নিশ জানাই বলে মন্তব্য করেন, বড়জোড়ার বিধায়ক অলক মুখার্জি । খবর পেয়েই অলকবাবু অর্ণবদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। স্বভাবে লাজুক অর্ণব তার বাড়িতে ভিভিআইপিদের ভিড় আর সাংবাদিকদের ফ্ল্যাশের ঝলকানিতে হতবাক। তখনো তার স্কুলে যাওয়া হয়নি। অথচ সব বৈদ্যুতিন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা তাকে তাদের চ্যানেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাকড়াও করতে চান। রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশন থেকে গাড়ি পাঠিয়ে অর্ণবকে তুলে নিয়ে যান মিশন কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকরাও পিছন পিছন ধাওয়া করে তাকে। অর্ণবের বাবা জগন্নাথ গরাই কাপিস্টা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। দুই ছেলে মেয়ে। দু’জনেই অত্যন্ত মেধাবী। মেয়ে বিপাশা মাধ্যমিকে ৯৪ ও উচ্চমাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর নিয়ে পাস করে এখন বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজে রসায়নের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। গ্রামের বাড়ি থেকে যোগাযোগের ভীষণ অভাব বলে ছেলেকে পঞ্চম শ্রেণিতে রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করি বলে জানান জগন্নাথ বাবু। পাশের গ্রাম বিড়রাতে একটি দু’ কামরার ঘর ভাড়া নিয়েছিলাম। ছেলের পরীক্ষার পর সেটা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছি। ওকে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করব বলে চিন্তা করেছি জানান
জগন্নাথবাবু।
অর্ণব জানায়, সে ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলিতে ব্যাচে টিউশনি পড়ত। সাধারণত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পড়ত। ডাক্তার হবার অদম্য ইচ্ছা রয়েছে তার। অর্ণব জানায়, ডাক্তার হয়ে গ্রামের মানুষের সেবা করতে চাই। তার বিদ্যালয়ের শিক্ষক গৃহশিক্ষক ও বাবা মায়ের জন্য এই সাফল্য এসেছে বলে জানায় সে। সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদার ভক্ত অর্ণব বলে, প্রথম হব স্বপ্নেও ভাবিনি। ভেবেছিলাম সেরা দশে থাকব।
রামহরিপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী দেবায়ন নীষ্ঠানন্দ মহারাজ বলেন, অর্ণব আমাদের বিদ্যাপীঠ বা বাঁকুড়ার গর্ব নয়। ও রাজ্যের গর্ব। ওর প্রখর মেধা শিক্ষকদেরও অবাক করত। অর্ণবের বিষয়ভিত্তিক নম্বরের মধ্যে ৯৯ পেয়েছে বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল ও জীবন বিজ্ঞানে। অংক ও পদার্থবিজ্ঞানে ১০০ এবং ইতিহাসে ৯৭।

