সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৮ জুন: দ্বারকেশ্বর নদের গর্ভ থেকে বালি তোলার সময় পাওয়া গেল পাথরের তৈরি প্রাচীন দেব মূর্তি। গতকাল বিকেলে এই ঘটনায় বাঁকুড়া জেলার ওন্দার ওলা দুবরাজপুর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিক ভাবে গবেষকদের ধারণা যে, বাদামী বেলেপাথরের তৈরি এই প্রাচীন মূর্তিটি দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুমূর্তি।
উল্লেখ্য, শনিবার বিকেলে ওন্দা ব্লকের ওলাদুবরাজপুর এলাকায় দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বালি তোলার সময় এই মূর্তিটি প্রথম চোখে পড়ে শ্রমিকদের। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কৌতুহলী জনতার ভিড় জমে যায়। ঝড়ের গতিতে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রচুর মানুষ ভিড় জমায়। গ্রামবাসীরা মূর্তিটিকে স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে যান।
পুরাতত্ত্ববিদদের বক্তব্য, এই মূর্তিটি অত্যন্ত মূল্যবান। বিশিষ্ট পুরাতত্ববিদ সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এটির ইতিহাসগত অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে। প্রায় ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা ও ২ ফুট চওড়া বাদামী বেলে পাথরের এই মূর্তিটি দ্বাদশভূজ লোকেশ্বর বিষ্ণুর। মূর্তির মাঝখানে রয়েছে বারোটি হাত বিশিষ্ট বিষ্ণুর মূর্তি। এই মূর্তির দু’দিকে দুই হাত রয়েছে আয়ুধ পুরুষের মাথায়। অপর দু’টি হাত রয়েছে দু’পাশে থাকা শ্রীদেবী ও ভূদেবীর মূর্তির মাথায়। গবেষকদের দাবি, মূর্তিটিতে কীরিট, কর্ণকুন্তল, বরমালা ও যজ্ঞোপবীত সহ অধিকাংশ অংশ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে। তাই মূর্তিটি শিল্পকর্মের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি একাদশ বা দ্বাদশ শতকে নির্মীত বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। সেদিক থেকে প্রত্নসামগ্রী হিসাবে অমূল্য এটি। এই মূর্তি উদ্ধারের খরব ছড়িয়ে পড়তেই একবার দেখার জন্য কার্যত মেলা বসে গিয়েছে এলাকায়।
উল্লেখ্য, জেলার কংসাবতী ও দ্বারকেশ্বর নদ তীরবর্তী এলাকায় প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া যায়। একসময় এই দুই নদের তীরে গড়ে উঠেছিল জৈন সভ্যতা। এই দুই নদী তীরবর্তী এলাকায় এখনও বহু জৈন স্থাপত্য রয়েছে। দ্বারকেশ্বর নদে উদ্ধার হওয়া বিষ্ণুর বিরল মূর্তিটি সেই প্রমাণ বহন করে।
স্থানীয়দের বক্তব্য, এই এলাকায় একসময় একটি প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির ছিল। সেই মন্দিরের নামানুসারে এলাকার নাম হয়েছে মন্দিরতলা। গ্রামবাসীদের বক্তব্য, দ্বারকেশ্বর নদীর ভাঙ্গনে মন্দিরটি তলিয়ে গেলে মূর্তিটি হারিয়ে যায়। এটি সম্ভবতঃ সেই মূর্তি। সেই মূর্তিই পুনরায় উদ্ধার হয়েছে। এতে তারা আনন্দিত। এটি ঈশ্বরেরই মহিমা বলে তাদের ধারণা।