Ananda Math, Organisation, ‘আনন্দ মঠ’ – স্বদেশ, শিকড় ও উত্তর প্রজন্ম

আমাদের ভারত, খড়দহ, ১৮ ডিসেম্বর: এবার পায়ে পায়ে অষ্টম বর্ষে পা দিল ‘আনন্দমঠ’ নামের সেবামূলক সংস্থা। মহালয়ার পূর্বে ৫০ মাকে অন্ন ও বস্ত্রদান করেছে এই সংস্থা। শীতে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের পিঠে-পায়েস খাইয়ে বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি পালন করেন তারা। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ দিয়ে থাকেন তারা। পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই সংস্থা বিগত বছরগুলি ধরে উত্তর প্রজন্মের মধ্যে স্বাদেশিকতা ও দেশপ্রেমের বীজ বপন করে চলেছে; সাথে পৃথিবী সবুজ ও সুন্দর রাখার ব্রতে তারা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ।

এই বছর আনন্দমঠ পত্রিকার সপ্তম সংখ্যা ‘মহীয়সী নারী’ পত্রিকার মলাট উন্মোচন এবং বার্ষিক অনুষ্ঠান উদ্‌যাপিত হল খড়দহ রহড়ার স্বামী পুণ্যানন্দ মুক্তমঞ্চে, গত ১৪ ডিসেম্বর। ‘স্বাধীনতা আন্দোলনে বাংলার পঞ্চকন্যা’ বিষয়ের উপর প্রবন্ধ প্রতিযোগিতা হয় ও সাফল্যের সাথে অতিক্রম ক’রে বিজয়ীরা পুরস্কৃত হয়।

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরম পূজ্য স্বামী অচ্যুতানন্দ মহারাজ (ইন্টারন্যাশনাল বেদান্ত সোসাইটি), খড়দহ রামকৃষ্ণ মিশন বালকাশ্রমের প্রাক্তন শিক্ষক প্রদীপ কুমার ভদ্র, রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত জাতীয় শিক্ষক প্রশান্ত কুমার মারিক, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ফুটবল খেলোয়াড় রঞ্জিত মুখার্জি, প্রাক্তন আই.জি. গোপাল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য এবং একাধিক দেশের অগম্য সফল পর্বতারোহী এবং ২০২৫ বর্ষের শেষে আমাজনে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও স্বাধীনতা দিবস পালনকারী করুণা প্রসাদ মৈত্র, দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির -এর সম্পাদক মিলন খামারিরা, রহড়া সানসেট বার্ডস-এর সহ-সভাপতি শেলী চক্রবর্তী, ড: রমনী রঞ্জন মজুমদার, প্রখ্যাত লেখক নীলাঞ্জন মুখোপাধ্যায়, উত্তর প্রজন্মের মধ্যে ছিলেন রাহুল ও দেবায়ন এবং খড়দহ রহড়ার আরো অনেক গুণী ব্যক্তিত্ব।।

তুলসী পূজন, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও আনন্দমঠের শিল্পীদের দ্বারা উদ্বোধনী সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল এই অনুষ্ঠান। গুণীজন সংবর্ধনা, সঙ্গীত, নৃত্য, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ডাকঘর নাটকের সংক্ষিপ্তাংশ, ছাত্র ছাত্রীদের সম্মাননা ও পুরস্কার প্রদান।

সিন্ধু সারস, পথমঙ্গল বাসর, মৌন মুখর, উদ্ভাস, রাজনন্দনী প্রভৃতি পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলী উপস্থিত থেকে সম্মানিত হন। লেখক ও চিত্রশিল্পী জয়ন্ত কুন্ডু তার কবিতার মাধ্যমে আনন্দমঠের প্রশস্তি রচনা করে আনন্দমঠকে সম্মানিত করেন এবং ছোট ও বড়োদের আবৃত্তি ও স্বরচিত কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল এই বার্ষিক অনুষ্ঠান। আনন্দমঠের অন্যতম ছাত্র অত্রি দাস-এর উদার কন্ঠের সঙ্গীত সবাইকে আপ্লুত করে। এছাড়া ছিল পুস্পিতা গুহ রায়, পিনাকপাণি চক্রবর্তী ও পাপিয়া গোস্বামীর গান। তবলায় সঙ্গতে অয়স্কান্ত গাঙ্গুলি ও স্বপ্নময় ব্যানার্জি এবং কীবোর্ডে প্রসেনজিৎ পালের উপস্থাপনা ছিল অসাধারণ। আনন্দমঠের কর্ণধার মিতালী মুখার্জির পরিচালনায় সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিবেশিত হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন রীতা পাকরাশী ও বিপ্লব কর্মকার‌। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল মহাভারতের দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ অবলম্বনে বর্তমান নারী নির্যাতনের প্রতিফলন।

এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে আনন্দমঠের সম্পাদক মিতালী মুখার্জি বলেন, আনন্দ মঠের সপ্তম সংখ্যা প্রকাশিত হলো গত ১৪ জানুয়ারি খড়দহের স্বামী পুণ্যানন্দ মুক্ত মঞ্চে। পিছিয়ে পড়া দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠান এই ‘আনন্দমঠ’ মূলত উত্তর প্রজন্মকে স্বদেশ ও শিকড়ের দিকে ফেরানোর প্রচেষ্টা করছে। তাদের এক সুস্থ-সমাজ ও সু-সংস্কৃতি দেবার জন্যই আনন্দমঠ। এই পুস্তকটি প্রকাশে -দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির-এর ‘স্বদেশ ও সাহিত্য’ গ্রুপের অবদান অসামান্য। প্রথিতযশা লেখকগণের লেখায় পুস্তকটি সমৃদ্ধ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থাপনা দর্শকের মনে গভীর রেখাপাত করেছে। বহুদূর দূরান্ত থেকে শিল্পী এবং দর্শকবৃন্দ এই শৈত্যপ্রবাহ সহ্য করেও এসেছেন আমাদের অনুষ্ঠানে এবং দীর্ঘ সময় বসে শিশুদের উৎসাহিত করেছেন।

আমরা ‘দেশের মাটি কল্যাণ মন্দির ‘এর সম্পাদক মিলন খামারিয়ার কাছে বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ, শুধু লেখা দিয়েই নয়, উপস্থিত থেকে এবং তার সুবক্তৃতার দ্বারা তিনি আনন্দমঠকে সমৃদ্ধ করেছেন। সকল শিল্পী, সকল দর্শকবৃন্দ এবং যারা বিভিন্ন ভাবে আমাদের সহায়তা করেছেন সবার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *