সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ১৬ জানুয়ারি: হাতির হানায় বড়জোড়ায় গোপবান্দী গ্রামের এক বৃদ্ধের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এলাকাজুড়ে। আজ ভোরে এই ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে মৃতের নাম শম্ভুনাথ মন্ডল (৭৫)। হাতির হানায় মৃত্যুর খবর শুনেই সাত সকালেই মৃতের বাড়িতে আসেন বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক অলক মুখার্জি। গ্রামের বাসিন্দারা শম্ভুনাথ মন্ডলের মৃতদেহ বাড়ির উঠোনে ফেলে রেখে বন কর্তাদের উপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছিলেন। অলকবাবু আসতেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
স্হানীয় বাসিন্দারা বলেন, বাঁকুড়ার হাতি সমস্যা নিয়ে আপনাদের মা মাটি সরকার বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। অথচ বাঁকুড়ার গরিব মানুষরা হাতির হানায় প্রাণ হারাচ্ছেন। গৃহহীন হচ্ছেন অসংখ্য দুঃস্থ পরিবার। এখানের মানুষ ধান চাষ থেকে মরসুমি ফসল ফলানো প্রায় বন্ধ করে দিয়েছেন। বিধায়ক অলক মুখার্জি বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শম্ভুনাথ মন্ডলের এক ছেলের যাতে বন দফতরে চাকরি দেওয়া হয় তার ব্যবস্থা তিনি করবেন। পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের অর্থ যাতে দ্রুত দেওয়া হয় তা উত্তর বাঁকুড়া বনবিভাগের ডিএফও’কে বলবেন। এই কথায় আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। তারা অলকবাবুকে সরাসরি প্রশ্ন করেন, আর কত মানুষের প্রাণ গেলে এবং কতজন গরিব গৃহহারা হলে সরকার হাতি তাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন। অলকবাবু বিষয়টি বিধানসভায় বন মন্ত্রকের কাছে উত্থাপন করবো বলে আশ্বাস দেন।
এপ্রসঙ্গে বড়জোড়ার প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক সুজিত চক্রবর্তী বলেন, ২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত আমি বিধায়ক থাকার সময় বাঁকুড়ার হাতি সমস্য নিয়ে একাধিকবার বিধানসভায় তুলেছি। আমি বিরোধী দলের বলে আমার কথাকে গুরুত্ব দেয়নি রাজ্য বন মন্ত্রক ও সরকার। অথচ ওই ৫ বছরে বাঁকুড়ায় এ নিয়ে অসংখ্য বৈঠক হয়েছে। কিন্তু আমাকে ডাকা হয়নি।
মৃতের বড় ছেলে তরুণ মন্ডল বলেন, প্রচন্ড শীতে সব শুনশান ছিল। ২টি হাতি আমাদের দরজার সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে তা বাবা টের পায়নি। ভোর ৪ টে ২০ নাগাদ বাবা ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই একটি দাঁতাল শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে। তারপর মাথায় পা দিয়ে থেঁতলে দেয়। চিৎকার শুনে উঠে দেখি সব শেষ। আমরা টাকা চাকরি নিয়ে কি বাবাকে ফিরে পাবো এই প্রশ্ন করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বাঁকুড়ার হাতি সমস্যা সমাধানের জন্য গড়ে ওঠা সংগঠন সংগ্রামী গণমঞ্চের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখার্জি বলেন, হাতির হানায় মৃত্যু হলে চাকরি দেওয়া শুরু করেছিল সরকার। এখনও বহু পরিবার চাকরি পায়নি। চাকরি দিলেও তা কিন্তু মূল সমস্যার সমাধান নয়। অবিলম্বে ময়ূরঝর্ণা প্রকল্পের রূপায়ণ করে স্থায়ী সমাধান চাই, এবং এখানই হাতি দুটিকে অন্যত্র সরানো হোক।
এবিষয়ে বড়জোড়ার রেঞ্জার ঋত্বিক দে বলেন, হাতি দুটি মাঝে মাঝে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতি করলেও প্রাণহানির মত ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এই ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ এবং হাতি দুটিকে অন্যত্র সরানোর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।

