চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার নজির! ভুল করে করোনা রোগীকে বাড়ি ফিরিয়ে ফের হাসপাতালে আনতেই মৃত্যু রোগীর

সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ২৯ এপ্রিল: কিছুদিন আগে একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে ওয়ার্ডে মৃতদেহ ফেলে রাখার অভিযোগ উঠেছিল এমআর বাঙুর হাসপাতালে। যদিও তার সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ফের চূড়ান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার অভিযোগ উঠল ওই একই হাসপাতালের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, করোনা পজিটিভ রোগীকে করোনা নেগেটিভ বলে পরিবারের কাছে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘন্টা পরে যতক্ষণে ভুল ভেঙেছে, ততক্ষণে পরিবারের সঙ্গে গোটা একটা দিন কাটিয়ে ফেলেছেন ওই করোনা রোগী। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতেই মৃত্যু হল ওই রোগীর।

জানা গিয়েছে, মৃত বৃদ্ধ আমহার্স্ট স্ট্রিট থানা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১৮ এপ্রিল থেকে তিনি অসুস্থতা বোধ করতে শুরু করেন। ২২ এপ্রিল বিকেলে প্রথমে একটি ফিভার ক্লিনিক এবং এমআরবাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে ভর্তি করে নেওয়া হয়।
এরপর ২৫ এপ্রিল স্বাস্থ্যভবন মারফত মৃতের ছেলে জানতে পারেন, তার বাবা করোনা পজিটিভ। এরপরেই গোটা পরিবারকে কোয়ারেন্টাইন করা হয়।

তারপরেই আচমকা পট পরিবর্তন! ওই দিন বিকেলেই এমআর বাঙুর হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলা হয়, ভুল করে তার বাবাকে করোনা পজিটিভ বলা হয়েছে। উনি আসলে করোনা নেগেটিভ। রাত ১০ টা নাগাদ হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই বৃদ্ধকে। স্বস্তি পায় পরিবারও। বৃদ্ধ ফিরে আসেন তার ৬৩ বছরের স্ত্রী, ৩৫ বছরের ছেলে, ৩২ বছরের পুত্রবধূ, ৭ মাসের নাতি এবং ৬ বছরের নাতনির কাছে।

এর পরে ফের নাটকীয় মোড়!
২৭ এপ্রিল বিকেলে ফের আবার স্বাস্থ্যভবন থেকে ফোন আসে। তারা কেমন আছেন, জানতে চাওয়া হয়। বৃদ্ধের ছেলে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিককে জানান যে, তাঁর বাবার রিপোর্ট নেগেটিভ পাওয়া গিয়েছে। বাবাকে হাসপাতাল ছেড়েও দিয়েছে। তাই তারাও ভাল আছেন। তার কয়েক ঘন্টা পরেই স্বাস্থ্য দফতর থেকে ফের ফোনে আঁতকে ওঠেন পরিবারের সদস্যরা। জানানো হয়, একটা মারাত্মক ভুল হয়েছে। ভুল করে এম আর বাঙুর কর্তৃপক্ষ করোনা পজিটিভ বৃদ্ধকে অন্য কারোর রিপোর্টের সঙ্গে গুলিয়ে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিয়েছেন। স্বাস্থ্যভবন থেকেই বৃ্দ্ধের পরিবারকে জানানো হয়, তারা অবিলম্বে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাচ্ছেন। বৃদ্ধকে ফের হাসপাতালে ফিরে আনা হবে।

সোমবার রাতেই স্বাস্থ্যভবন থেকে ওই বৃদ্ধের বাড়িতে পাঠানো হয় অ্যাম্বুল্যান্স। নিয়ম মেনে বৃদ্ধকে ফের নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙুর হাসপাতালে। বৃদ্ধের ছেলে জানাচ্ছেন, বাড়িতে আসা থেকে হাসপাতালে যাওয়া পর্যন্ত যথেষ্ট অসুস্থ ছিলেন বাবা। আর তারপরের দিনই সকালে জানানো হয়, বৃদ্ধ মারা গিয়েছেন। গোটা ঘটনা ঘিরে চরম আতঙ্কে গোটা ওই পরিবার। চূড়ান্ত অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের বাকিরা এখন চূড়ান্ত আশঙ্কায় ভুগছেন। জানানো হয়েছে, ৪ মে তাদের সকলের করোনা পরীক্ষা করা হবে। পুরো বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে রেখেছিলেন বৃদ্ধের ছেলে।

কিন্তু মহামারী পরিস্থিতিতে এত মারাত্মক ভুল হয় কি করে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে চাপানউতোর। এমআর বাঙুর হাসপাতালের সুপার শিশির কুমার নস্করের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। তাঁকে হোয়াট্‌সঅ্যাপে মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এমআর বাঙুরে এ রকম একটা ঘটনার কথা শুনেছি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’ স্বাস্থ্যভবন থেকেই ফোন করে ভুল কাজ ঠিক করা হল, অথচ তিনি কী ভাবে জানেন না, সে প্রশ্ন উঠেছে। আদৌ এই ঘটনার পিছনে কার দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, তিনি আদৌ কোনও শাস্তি পাবেন কি না, না কি পুরো ঘটনাই সুনিপুণ ভাবে চাপা পড়ে যাবে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *