নীল বণিক, আমাদের ভারত, কলকাতা, ২৯ অক্টোবর :
কলেজ স্ট্রিটে দাঁড়িয়ে হাতে এবিভিপির ঝান্ডা নিয়ে পথ অবরোধ করা ছেলেটা আজ রাজ্য বিজেপির সাধারণ সংগঠন সম্পাদক। বিজেপিতে এই পদটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাংগঠনিক কাজকর্ম মূলত তাঁর হাতেই থাকে।
অমিতাভ চক্রবর্তী ছাত্রজীবন থেকেই সাংগঠনিক নেতা ছিলেন। ১৯৮৯ সালে বালুরঘাট কলেজে পড়াশোনার সময় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বালুরঘাট কলেজ ছাত্র রাজনীতি করেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী অমিতাভ চক্রবর্তী, একসঙ্গে বালুরঘাট কলেজে বিদ্যার্থী পরিষদ করেছেন। বালুরঘাট কলেজে গেরুয়া পন্থী ছাত্রসংগঠন করায় তার উপর একাধিকবার হামলা চালিয়েছিল বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই কর্মীরা। ১৯৯১- ৯২ সালে অমিতাভ চক্রবর্তী ঘরেও আগুন ধরিয়ে দেন বামপন্থী কর্মীসমর্থকরা। বালুরঘাট কলেজে পড়াশুনা শেষ করে এরপর উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হন তিনি।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অমিতাভ চক্রবর্তী গেরুয়া পতাকা তুলতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিয়ে এসএফআই বিরোধী জোট করেছিলেন। যার ফলে বাংলায় প্রথম উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় পরাজয় হয়েছিল ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের। ১৯৯৫ থেকে ৯৮ পর্যন্ত টানা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইকে হারানো সম্ভব হয়েছিল। সেই সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অমিতাভ চক্রবর্তী বাম সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন। বাম ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসের শিকার হয়ে সাত-আটবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। যার সাক্ষী শরীরে এখনো বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন অমিতাভ চক্রবর্তী। বাম হামলার ফলে তার কপালের ক্ষতের দাগ এখনো জ্বলজ্বল করছে। পড়াশুনা শেষ করার পর এরপরই সংগঠনের কাজে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবন বিসর্জন দিয়ে উত্তরবঙ্গ ছাড়েন।
মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবার থেকেই অমিতাভ চক্রবর্তী রাজনীতিতে এসেছিলেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ঠাকুরবাড়ির ছেলে তিনি। উত্তরবঙ্গের মাটি ছেড়ে কলকাতায় আসার পর দুই, চার জনকে নিয়ে সংগঠনের কাজে লেগে পড়েন।
২০১৫ সালে এবিভিপিতে বড় পদ পান অমিতাভ চক্রবর্তী। এবিভিপি ক্ষেত্রীয় সংগঠন সম্পাদক হন তিনি। ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান, সিকিমের দায়িত্ব সামলান, বর্তমান রাজ্য বিজেপির সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৮ সালে ওড়িশার দায়িত্ব দিয়ে বিজেপিতে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন অমিতাভবাবু। ওড়িশার সম্বলপুর এলাকার বিধানসভার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে সামলান তিনি। সেই দায়িত্ব সামলানোর পর তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে নিয়ে আসে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিগত লোকসভা ভোটের আগে তাঁকে জঙ্গলমহলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। জঙ্গলমহলে বিজেপির ভালো ফল করার পরই তাঁকে সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ডেপুটি করা হয়। অবশেষে বুধবার রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক শীর্ষে অমিতাভ চক্রবর্তীকে বসান জেপি নাড্ডা।