সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ২৫ জুন: সরকারি জমি জবরদখলের সাথে সাথে শহরাঞ্চলের রাস্তাও চলে গেছে এক শ্রেণির জবরদখলকারীর হাতে। যার ফলে নিত্য যানজট, স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা তো দূরের কথা। এই বাস্তব সত্যটা এতদিন পর স্বীকার করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্ৰহণের নির্দেশও দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর এই পদক্ষেপে শহরজুড়ে আলোড়ন শুরু হয়েছে।
বাঁকুড়া শহরের রাস্তা সহ ফুটপাত যে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও জবরদখলকারীর দখলে তা সর্বজনবিদিত। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পর পুরসভা ও জেলা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেন তা নিয়ে শহরজুড়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া শহরে লালবাজার থেকে রানীগঞ্জ মোড়, সুভাষ রোড, বড়বাজার, মাচানতলা, কলেজরোড, মসজিদ গোড়া, পোস্ট অফিস মিনিমার্কেট সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ফুটপাত থেকে রাস্তা জবরদখল করে চলছে ব্যবসা। হকাররা তো রাস্তায় বসছেই, সেই সঙ্গে এক শ্রেণির ব্যবসাদার তাদের দোকানের মালপত্র রাস্তায় সাজিয়ে রাখছে খদ্দেরের নজরে আনতে। রাস্তা দখল মুক্ত করতে জেলা প্রশাসন বারে বারে পদক্ষেপ নিলেও কোনও অজানা কারণে তা মাঝপথেই বন্ধ হয়ে যায়।সম্প্রতি হকারদের পুনর্বাসনের জন্য নতুনচটিতে কৃষক বাজারে ব্যবস্থা করা হলেও হকাররা সেখানে না গিয়ে ফুটপাতকেই বেছে নিয়েছেন। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে ও হাসপাতালের সামনের রাস্তাই শুধু জবরদখল নয়, অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত ঢুকতে বাধা পায়।
কিছুদিন আগে রানীগঞ্জ মোড় থেকে মাচানতলা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশের ড্রেন ঢাকা দিয়ে ফুটপাত বাঁধিয়ে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য ছিল পথচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারবে, পথ দুর্ঘটনাও কমবে। কিন্তু ফল হলো উল্টো।বাঁধানো ফুটপাত চলে গেল একশ্রেণির দোকানদারদের খপ্পরে। তারা তাদের দোকানের পসরা দোকানের সামনের ফুটপাতে সাজিয়ে খদ্দেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। ব্যাপারটা এমন দাঁড়িয়েছে যেন দোকানের সামনের ফুটপাত তার আধিকার। এবার খদ্দেরকে মাল কিনতে রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। এরফলে রাস্তায় ভিড় জমছে, তার সাথে যোগ হয়েছে টোটোর দৌরাত্ম্য।তারা যেন আইনের ঊর্ধ্বে।যখন তখন, যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, সাইকেল মোটরসাইকেলের ভিড় কমাতে মাচালতলায় দুটি সাইকেল স্ট্যান্ড নির্মাণ করা হয়, সেই স্ট্যান্ডে বহাল তবিয়তে চলছে ব্যবসা।এখানে শাসক দলের মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ।
সাধারণ মানুষের নাকাল হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পূর্বতন পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত রাস্তা জবরদখল মুক্ত করতে পথে নামলে মাচানতলা মোড়েই বিক্ষোভের মুখে পড়েন। তাকে ঘিরে অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে।পরবর্তীতে উপপুরপ্রধান দিলীপ আগরওয়াল ও প্রচেষ্ঠা চালিয়ে দলীয় সমালোচনার মুখে পড়েন।এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। এবার কি তাহলে পুরসভা ও জেলা প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এই প্রশ্ন এখন শহরের সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে পুরপ্রধান অলকাসেন মজুমদার বলেন, আজই জেলাশাসকের সাথে কথা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একটি সভা করে যানজট ও জবরদখল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।