আশিস মণ্ডল, সিউড়ি, ৫ ডিসেম্বর: এসআইআর নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে একাধিক সমস্যার কথা শুনলেন কমিশন নিযুক্ত ভোটার তালিকা সংক্রান্ত বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে একাধিক ত্রুটির কথা তুলে ধরা হয় পর্যবেক্ষকের সামনে। সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সুব্রতবাবু।
শুক্রবার সিউড়ি জেলা শাসকের সভাকক্ষে এস আই আর সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বসে। বৈঠকে বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক ধবল জৈন। এদিন একে একে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে সমস্যার কথা শোনেন বিশেষ পর্যবেক্ষক। সেগুলি লিখিত আকারে গ্রহণও করেন। বিজেপির পক্ষ থেকে একাধিক বিষয়ে ত্রুটির কথা তুলে ধরা হয়েছে।

বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বীরভূম জেলার ৩০৭৬ বুথের মধ্যে আটশো বুথ এমন পাওয়া গিয়েছে মৃত, স্থানান্তরিত এবং স্থায়ী ভাবে অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটারের সংখ্যা খুবই কম দেখানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে বলেছে এরকম ভোটার যেসব বুথে পঞ্চাশের কম সেগুলো পুনরায় খতিয়ে দেখা হবে। আমরা জানিয়েছি বীরভূম জেলায় এরকম বুথের সংখ্যা আটশো। সেই সব বুথে ২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে রয়েছে এরকম ভোটার। কোনো বুথে দেখা গিয়েছে, ১০০০ হাজার ভোটার রয়েছে, এমন বুথে ২৩ বছরে একজন মারা গিয়েছেন। সেই বুথ গুলিতে ভালোভাবে কাজ করার দাবি জানিয়েছি। জেলায় ৯৯ শতাংশ এনুমারেশন ফর্ম জমা হয়ে গিয়েছে। ফলে এখন বিএলও’দের কাছ থেকে হলফনামা নিতে হবে যে তাঁরা সঠিক ভাবে কাজ করেছেন। যদি ঠিক ভাবে কাজ করে না থাকেন তাহলে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর ইচ্ছাকৃত ভাবে মৃতদের নাম প্রকাশ করলে বিএলও সহ সংশ্লিষ্ট অফিসাররা শাস্তির মুখে পড়বেন। বিশেষ পর্যবেক্ষক আমাদের বক্তব্য শুনে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে এবিষয়ে সচেতন করেছেন। বীরভূমের প্রতিটি বিধানসভায় বংশধরদের নাম দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম তোলার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এই বুথ গুলি ধরে ধরে পুনরায় তদন্ত করার দাবি জানিয়েছি। এরপর শুনানি পর্ব রয়েছে। বিধানসভা ভিত্তিক প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে ডাকা হতে পারে। যাদের ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম নেই। যারা প্রজেনি লিঙ্ক দেখিয়ে ফর্ম জমা দিয়েছেন তাদের ডাকা হবে। আমরা কমিশনের পর্যবেক্ষকের কাছে আবেদন করেছি শুনানির সময় পর্যাপ্ত জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ ওই সময় সকলকে কাগজ দেখাতে হবে। খসড়া তালিকা প্রকাশের পর আমরা ধরে ধরে মৃতদের নাম প্রকাশ্যে আনব এবং দায়ী বিএলওদের জেলে ঢোকাব।” জগন্নাথবাবুর অভিযোগ, জেলা প্রশাসন খারাপ কাজ করছে। তারা এক পক্ষ হয়ে কাজ করছে। আমরা প্রশাসনের কাজে সন্তুষ্ট নই। বিএলও এবং সুপারভাইজার স্তরে কিছু কাজের গণ্ডগোল রয়েছে।”
তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র সিউড়ি শহর সভাপতি রাধাবল্লভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০০২ সালে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু ভোটার তালিকায় নাম নেই। বিধানসভা ভিত্তিক ৩-৪ শতাংশ এরকম ভোটার রয়েছে। মানুষ না মারা গেলে কিভাবে তাদের মৃত দেখানো হবে? ৮০ বছর বয়স হয়ে গেলে পুলিশ নিয়ে তাদের বাড়িতে ছবি করা হচ্ছে এতে ভোটাররা আতঙ্কিত হচ্ছে। একটা মৃত ভোটার যেন না থাকে আমরাও দলের পক্ষ থেকে বলেছি। তবে একটি বৈধ ভোটারের নামও যেন বাদ না যায় সেটাও আমরা দেখব।”
বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত বলেন, “কিছু অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো খতিয়ে দেখা হবে। কাজ ঠিকঠাক এগোচ্ছে। যে সমস্ত বুথে মৃতের সংখ্যা ঠিকঠাক বাদ দেওয়া যায়নি, মনে হলে সেই সমস্ত বুথে এআরও-রা সেই সমস্ত বুথে ব্যক্তিগতভাবে যাবেন। প্রজেনি ভোটার নিয়ে কিছু সমস্যার কথা উঠে এসেছে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যাবে কিছু পরিযায়ী শ্রমিকরা ২০০২ সালে সার্ভের সময় এলাকায় ছিলেন না। এগুলো আমরা নতুন করে দেখব।”

