পার্থ খাঁড়া, আমাদের ভারত, ৮ ডিসেম্বর: বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননা এবং সংখ্যালঘু হিন্দু ও মডারেট মুসলমানদের গণহত্যার বিরুদ্ধে আগেই ভারতে চিকিৎসা করতে আসা বাংলাদেশিদের সামাজিক ভাবে বয়কট করার কর্মসূচি শুরু করেছে ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। এবার তারা রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে একযোগে কলকাতার দশটি মেট্রো স্টেশনের সামনে একই সময়ে সমস্তরকম বাংলাদেশি পণ্য আগুনে পুড়িয়ে “বয়কট বাংলাদেশ” বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করলো।
উত্তমকুমার, নেতাজী, মাস্টার দা সূর্যসেন, গীতাঞ্জলি, নজরুল, শহিদ ক্ষুদিরাম, কবি সুভাষ সহ দশটি মেট্রো স্টেশনের সামনে আজ হিন্দু মহাসভার সদস্যরা পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে বাংলাদেশি খাদ্য সংস্থা “PRAN” এর সামগ্রী কিনে এবং বাংলাদেশি জামাকাপড়ে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয়।
এই প্রসঙ্গে রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য, বাংলাদেশকে সার্বিক ভাবে বয়কট করা উচিত, কারণ বাংলাদেশ আজ উন্মাদ ও সন্ত্রাসবাদীদের আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। আর সেই জন্যই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশি বৃদ্ধ সেনা আধিকারিকও চার দিনের মধ্যে কলকাতা পর্যন্ত দখল করার বা ভারত এবং আমেরিকাকে একযোগে দখল করার আস্ফালন করছে। ওরা ভুলে গেছে আমাদের সেনা জওয়ানদের আত্মবলিদানের ফলেই আজ পৃথিবীতে বাংলাদেশ নামে কোনো রাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ করেছে। আজ এই দেশে মহিলাদের একা বাজারে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ, বোরখা পরার বাধ্যবাধকতা, সঙ্গীতানুষ্ঠান নিষিদ্ধ করার ফতোয়া জারি হওয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি ভাঙ্গা ও তার মাথায় প্রস্রাব করা, লাইব্রেরিতে অগ্নিসংযোগ, শপিংমল লুঠ করা, মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলে মৃতদেহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে সেলফি তোলা প্রভৃতি ভিডিও ভাইরাল করা ইত্যাদি প্রমাণ করে এতদিন ধরে যে বাংলাদেশকে ভারত চিনে এসেছে তার ডিএনএ অনেক আগেই বদলে গেছে। চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে গভীর চক্রান্ত করে ভারতকে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্ত্যক্ত করছে বাংলাদেশ এবং এক্ষেত্রে ভারতের অতিরিক্ত সহনশীলতা এবং তোষণমূলক বৈদেশিক নীতিও কিছুটা দায়ী থাকতে পারে বলে অনুমান। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন অনুযায়ী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনতিবিলম্বে বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানো প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন ডক্টর গোস্বামী।
হিন্দু মহাসভার অফিস সেক্রেটারি অনামিকা মন্ডল বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে শিশু ও নারীরা অত্যাচারিত হচ্ছে সেটা যে কোনো সভ্য সমাজকে লজ্জা দেয়। চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুকে অন্যায় ভাবে গ্রেপ্তার এবং ইসকনের উপর লাগাতার আক্রমণ একথা প্রমাণ করে বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বলে কিছু নেই।
মহিলা শাখার কনভেনর প্রজ্ঞা ভারতীর বক্তব্য, বাংলাদেশে যেহেতু আমাদের ভাইদের প্রাণে মারা হচ্ছে, তাই পাল্টা আমরা ওদের ভাতে মারতে চাই। বাংলাদেশি পণ্য সম্পূর্ণ ভাবে বয়কট করে এবং বিকল্প হিসেবে দেশীয় হস্তশিল্পজাত সামগ্রী ব্যবহার করেই ওদের সমুচিত শিক্ষা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভার পশ্চিমবঙ্গ শাখা আগামী দিনে যে আরো বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে চলেছে সেই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।