জে মাহাতো, আমাদের ভারত, মেদিনীপুর, ১ সেপ্টেম্বর: ঐতিহাসিক ছাত্র শহিদ দিবসকে রাজ্য সরকারের পুলিশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ১লা সেপ্টেম্বরের ছাত্র শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছে। অল ইন্ডিয়া ডিএসও ছাত্র সংগঠনটির জেলা কমিটির পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত মেদিনীপুরের কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক মনি শঙ্কর পট্টনায়েক। এছাড়াও ছিলেন সংগঠনের জেলা সভাপতি কমরেড বিশ্বরঞ্জন গিরি ও সম্পাদক কমরেড ব্রতীন দাস। শহিদ বেদিতে মাল্যদান ও শহিদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও শপথ বাক্য পাঠ করার মধ্য দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়।

সংক্ষিপ্ত পথসভা ও শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানে সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মনি শঙ্কর পট্টনায়েক বলেন, “১৯৫৯ সালের ৩১ আগস্ট ভুখা মানুষের খাদ্যের দাবিতে আন্দোলনে তৎকালীন কংগ্রেস সরকার গুলি চালিয়ে শতাধিক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেদিন এই বাংলার বিবেকবান লাখো ছাত্রসমাজ পরের দিন ১লা সেপ্টেম্বর পুলিশের এই বর্বর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত করে। ছাত্রদের এই স্বতঃস্ফূর্ত মিছিলে তৎকালীন পুলিশ আবারো গুলি চালায় এবং ৪ জন ছাত্র মৃত্যু বরণ করেন। সেই থেকেই ১ লা সেপ্টেম্বর ছাত্র শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটা তাই ছাত্র আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেমন শোকের দিন তেমনি ছাত্র আন্দোলনকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার শপথ নেওয়ার দিনও বটে।”

তিনি আরো বলেন, “সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলেরও পরিবর্তন ঘটেছে কিন্তু এদের চরিত্রের কোনও বদল ঘটেনি। পরবর্তী ক্ষেত্রে ১৯৯০ সালে বামফ্রন্ট সরকার ৩১ শে আগস্ট সারা পশ্চিমবঙ্গের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ যখন মূল্যবৃদ্ধি ও বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে কলকাতার রাজপথে মিছিল করছে তখন এই সরকারের পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। অসংখ্য মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।কিশোর মাধাই হালদার মৃত্যু বরণ করেন। আজ তৃণমূল সরকারও ঐতিহাসিক ছাত্র শহিদ দিবসের দিনকেই পুলিশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ ১লা সেপ্টেম্বর পুলিশের গুলিতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মৃত্যুর বর্বরতা ভুলে গিয়ে এই দিনটাকে পুলিশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে পুলিশের এই বর্বরতাকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দিলেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।”

মেদিনীপুর শহরের কলেজগেট থেকে কলেজিয়েট স্কুল ও রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে পর্যন্ত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি দুই হাজার কুড়ি’ বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলার খড়গপুর, বেলদা, নারায়ণগড়, সবং, পিংলা সহ একাধিক জায়গায় এই শহিদ দিবস পালন করা হয়।

