আমাদের ভারত, ৩ নভেম্বর: সেই ৮ অক্টোবর থেকে কলকাতার গান্ধী মূর্তির পাদদেশে তৃতীয়বারের জন্য ধর্ণায় বসেছেন মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত নবম- দশম এবং একাদশ- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক পদপ্রার্থীরা। ২০১৬ সালে নবম- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে এস এল এস টি পরীক্ষার আয়োজন করেছিল পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগে প্রকাশিত গেজেট লঙ্ঘন,অস্বচ্ছতা, মেধাতালিকা ভুক্ত সামনের সিরিয়ালে থাকা প্রার্থীদের বঞ্চিত রেখে অনেক পিছনের দিকে সিরিয়ালে থাকা প্রার্থীদের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি মেধাতালিকায় নাম না থাকা অযোগ্য প্রার্থীদের শিক্ষক- শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। তাদের দাবি এই ঘটনা শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির ঐতিহাসিক নজির।
ধর্নায় বসা মেধা তালিকাভুক্ত যোগ্য অথচ বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ, বার বার অনশন এবং ধর্ণায় তারা বসতে বাধ্য হলেও তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কোনো পদক্ষেপ স্কুল সার্ভিস কমিশন গ্রহণ করছে না। তারা জানিয়েছেন শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল, সেই গেজেট নামমাত্র। কেননা গেজেটের গুরুত্বপূর্ণ অনেক অংশ সুকৌশলে কমিশন এড়িয়ে গেছে।গেজেটে চাকরি প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষার নম্বর, একাডেমিক স্কোর, ভাইভার নম্বর প্রকাশের কথা উল্লেখ থাকলেও কমিশন চাকরি প্রার্থীদের নম্বর ভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি।পাশাপাশি সাবজেক্ট, ক্যাটেগরি গুলিতে গেজেটে উল্লিখিত ১:১.৪ অনুপাতে ডাকার নিয়ম ও লঙ্ঘন করেছে। আবার আপডেট শূন্যপদে নিয়োগের বিষয়টি নিয়মে থাকা সত্ত্বেও আপডেট শূন্যপদে নিয়োগ করেনি কমিশন।
নবম- দ্বাদশ স্তরের শিক্ষক নিয়োগের যে মেধাতালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, সেই তালিকায় কেবলমাত্র চাকরি প্রার্থীদের নাম, রোল নম্বর, র্যাঙ্ক নম্বরের উল্লেখ ছিল। কিন্তু প্রার্থীদের প্রাপ্ত নম্বর লুকিয়ে রাখা হয়েছিল। আর এখানেই দুর্নীতির রহস্য লুকিয়ে ছিল বলে তাদের দাবি। এখানেই শেষ নয়, মেধাতালিকা প্রকাশের পরেও কোনো রকম কারণ না দেখিয়ে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই প্রকাশিত মেধাতালিকায় নতুন কিছু চাকরি প্রার্থীদের নাম পরবর্তীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতির অভিযোগে ২০১৯ সালে কলকাতার প্রেসক্লাবের সামনে অরাজনৈতিক ভাবে যুব ছাত্র অধিকার মঞ্চের ব্যানারে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার নবম- দ্বাদশ স্তরের মেধা তালিকাভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ ২৯ দিন ব্যাপী অনশনে বসেছিলেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তদানীন্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দিয়েছিলেন যে মেধাতালিকা ভুক্ত চাকরি প্রার্থীগণ যাতে বঞ্চিত না হয় তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে আইনের কিছু পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু অনশনকারীদের অভিযোগ পরবর্তীতে দেখা গেছে চাকরি প্রার্থীদের সমষ্টিগত সমস্যার সমাধান না করেই বঞ্চিত চাকরি প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের একাংশ সহ তাদের ঘনিষ্ঠ চাকরি প্রার্থীদের র্যাঙ্ক ব্রেক করে পিছনের দিকে থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ করেছে কমিশন।
এর পরেই দ্বিতীয় পর্বের আন্দোলন শুরু হয়। যা প্রায় ছয় মাস ধরে চলে।সেই বর্তমান স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বলেন, নবম- দ্বাদশ স্তরের মেধাতালিকা ভুক্ত অথচ বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীদের সমস্যার বিষয়টি কমিশন বিশেষ নজর দিয়ে দেখছে। তার জন্য চল্লিশ দিন সময় নিয়েছিল কমিশন। কিন্তু তাও পেরিয়ে যায়। ফলে বাধ্য হয়ে মেধাতালিকা ভুক্ত বঞ্চিত শিক্ষক পদপ্রার্থীগণ মহামান্য হাইকোর্টের অনুমতি ৮ অক্টোবর থেকে আবার প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। তাদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী নিজে সরাসরি এবিষয়ে হস্তক্ষেপ করে যেনো দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।