আমাদের ভারত, ব্যারাকপুর, ১৮ নভেম্বর : কর্মরত অবস্থায় এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ল উত্তর ২৪ পরগনার আগরপাড়া টেক্সমেকো কারখানায়। কর্মরত অবস্থায় কারখানার অ্যাসবেসটসের ছাদ ভেঙ্গে প্রায় ৩০ ফুট নিচে লোহার পাইপের উপর পড়ে ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত অবস্থায় মৃত্যু হল এক শ্রমিকের। মৃত ওই শ্রমিকের নাম বিশ্বজিৎ ঘোষ, তাঁর বয়স আনুমানিক ৪২ বছর।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজিত ঘোষ চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন আগরপাড়ার টেক্সম্যাকো কারখানায়। প্রতিদিনের মত বুধবার সকালে কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছিল বিশ্বজিতবাবু। তিনি এই কারখানার বিল্ডিং ডিপার্টমেন্টের এসবেস্টসের ছাদের উপরে উঠে কাজ করছিলেন। বিশ্বজিত হঠাৎ করেই উঁচু সেই অ্যাসবেসটসের ছাদ থেকে নিচে লোহার পাইপের উপর পড়ে যান। মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয় তার। এর পরই তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে শ্রমিক মহলে। অন্যান্য শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে মৃত শ্রমিকের পরিবারের জন্য ৩ লক্ষ টাকা নগদ আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও মৃতের পরিবারের এক সদস্যের স্থায়ী চাকরির দাবি জানাতে শুরু করে।
কারখানায় শ্রমিকের মৃত্যুর পর শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বেলঘড়িয়া থানার পুলিশ। মৃতের পরিবারের সদস্যদের অবিলম্বে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবিতে মৃত শ্রমিকের দেহটি ঘটনাস্থলে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে অন্যান্য শ্রমিকেরা। ওই শ্রমিকের বাড়ি সোদপুর নাটাগড় এলাকায় বলে জানা গেছে। বিশ্বজিত ঘোষের মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবার ও পাড়ার লোকজন ভিড় জমায় টেক্স ম্যাকো কারখানার গেটের বাইরে। মৃতের পরিবারের লোকজন কারখানার ভিতরে ঢুকতে চাইলে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে প্রথমে তাদের কারখানার ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয় টেক্সম্যকো কারখানার নিরাপত্তারক্ষীরা। তখনই উত্তেজিত হয়ে পড়ে মৃতের পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা। চেষ্টা চালানো হয় কারখানার গেট ভেঙ্গে ভেতরে ঢোকার। অবশেষে মৃতের পরিবারের লোকজনকে কারখানায় ঢোকার অনুমতি দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। মৃতের পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ শনাক্ত করে।
কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, এই কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের কোনও নিরাপত্তা নেই । এর আগেও একাধিকবার এই কারখানায় কাজ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শ্রমিক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পায়নি। এদিনও একই ঘটনা ঘটে গেল। কারখানা কর্তৃপক্ষ মৌখিক ভাবে মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও লিখিত ভাবে মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক ক্ষতপূরণ দেওয়ার কোনও কথা বলেনি। কারখানার স্বীকৃত সবকটি শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে মৃতের পরিবারের সদস্যদের নগদ ৩ লক্ষ টাকা আর্থিক সহায়তা পান এবং মৃতের পরিবারের এক সদস্যের দ্রুত চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা। মালিকপক্ষ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলে ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের জানিয়ে দেয়। পরে শ্রমিকদের বুঝিয়ে বিক্ষোভ তুলে দেয় বেলঘরিয়া থানার পুলিশ।
ওই শ্রমিকের মৃত্যুর প্রায় ৫ ঘণ্টা পর বেলঘরিয়া থানায় পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। গোটা ঘটনায় বুধবার সকাল থেকে দিনভর এই কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয় । বেলঘরিয়া থানার পুলিশ এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। শ্রমিকরা জানিয়েছে, মৃত শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা ক্ষতিপূরণ না পেলে তারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে।