আমাদের ভারত, হাওড়া, ২২ ডিসেম্বর: আবার একটা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের সময় এসে গেছে। নিজেদের বাঁচাতে হলে এগিয়ে আসতে হবে। এগিয়ে না এলে ভগবানও আমাদের বাঁচাতে পারবেন না। এভাবেই সিংহ বাহিনীর কর্মী সম্মেলনের প্রকাশ্য সভায় চড়া সুরে বক্তব্য রাখলেন হিন্দু নেতা তপন ঘোষ। সিংহবাহিনীর সভাপতি দেবদত্ত মাজি বলেন, এখন শুধু নামকীর্তন করলে হবে না। ধর্ম রক্ষার জন্যও লড়তে হবে।
হাওড়া বালিতে দুদিনের কর্মী সম্মেলন শেষে আজ ছিল সিংহবাহিনীর প্রকাশ্য সমাবেশ। সেই সমাবেশে সংগঠনের উপদেষ্টা হিন্দু নেতা তপন ঘোষ বলেন, পৃথিবীতে এখন ৫৭টা ইসলামিক দেশ রয়েছে। তাদের এখন লক্ষ্য এই সংখ্যা ৫৮–তে নিয়ে যাওয়া। এজন্য তারা পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমকে বেছে নিয়েছে, চাইছে বৃহত্তর বাংলা গড়তে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় সম্প্রতি যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে, তার উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই আন্দোলনকারীরা শুধু মোদীকেই নয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে। তারা ভারতের রাষ্ট্রশক্তিকে মানবে না। তাই তাদের এই ক্ষমতা প্রদর্শন। তাদের লক্ষ্য পাকিস্তান। তিনি বলেন, এই আন্দোলন উত্তরপ্রদেশ, গুজরাটে হয়েছে, সেখানেও হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। তাই বলছি, মোদী, অমিত শাহ বা যোগী সমাধান নয়, তাঁদের নাম করে আপনারা বাঁচতে পারবেন না। নিজেকে বাঁচানোর জন্য শক্তি অর্জন করুন। তা নাহলে পূর্ববাংলার মতো আবারও আপনাদের লাথি খেতে হবে।
মহিলাদের উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্য, দখলদাররা ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। বাংলাদেশের পর এবার আপনার গ্রাম আপনার ঘরেও আক্রমণ হবে। তাই স্বামী বা সন্তানদের আঁকড়ে রাখবেন না। এই সংকট থেকে রক্ষা পেতে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে, কারণ মোদী, অমিত শাহ–র নাম করলে হবে না। রাজনীতির কাজ রাজনীতি করবে। রাজনীতিকরা সব কাজ করতে পারেন না। এই লড়াইয়ের কাজ সমাজকেই করতে হবে।
ছবি: গীতা হাতে হিন্দুধর্ম রক্ষার জন্য শপথ বাক্য পাঠ।
তিনি বলেন, এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে গেলে আমাদের ধর্ম যুদ্ধে নামতে হবে। মহাভারতের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের সঙ্গে থাকলেও অভিমুন্যকে বাঁচিয়ে অর্জুনকে পুত্র থেকে রক্ষা করেননি। ভগবান সঙ্গে থাকলেও অর্জুনকেই নিজের লড়াই লড়তে হয়েছিল। ঠিক সেইভাবে আমাদেরও আবার কুরুক্ষেত্রের লড়াই করতে হবে।
ছবি: দেবদত্ত মাজি, সভাপতি, সিংহ বাহিনী।
সিংহ বাহিনীর সভাপতি দেবদত্ত মাজি বলেন, মনে কোনো দ্বিধা না রেখে এগিয়ে যেতে হবে। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ধর্মযুদ্ধে যারা অংশ নেবে তাদের স্বর্গবাস। তাই এখন শুধু নাম সংকীর্তন করলে হবে না, নাম সংকীর্তনের পাশাপাশি ধর্ম রক্ষার জন্যও লড়াই করতে হবে।
এই কর্মী সম্মেলনে এসেছিলেন আমেরিকার টেক্সাসের হিউস্টন শহরের বাসিন্দা তথা গুজরাটের অনাবাসী দিলীপভাই মেহেতা। গত পঞ্চাশ বছর ধরে তিনি আমেরিকাতেই আছেন। সেখানকার ভোটার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ভারতের সঙ্গে আমার নাড়ির টান রয়েছে, তাই আজ সিংহ বাহিনীর সভায় আমি হিস্টন থেকে এখানে এসেছি। আমার সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করেছিল ভারতে যাচ্ছেন, কোন কোন তীর্থস্থান দর্শন করতে যাবেন। আমি বলেছিলাম আমি সোজা কলকাতায় যাব। আজ এই সম্মেলনে এসে এই হিন্দু যুবকদের দেখে আমি গর্বিত। এই কট্টর হিন্দুদের সঙ্গে মিলিত হওয়াটাই আমার তীর্থযাত্রা। তিনি বলেন সুদূর আমেরিকায় থেকেও আমরা ভারতের সঙ্গে একাত্ম অনুভব করি। এই একাত্মতা অনুভবের কারণ আমাদের সনাতন হিন্দু ধর্ম। এই সনাতন ধর্মই আমাদের একসঙ্গে জুড়েছে। তিনি বলেন, সবার পক্ষে লড়াই করা সম্ভব নয়, কিন্তু অত্যাচার হলে অন্তত পক্ষে আওয়াজ তুলতে হবে– অত্যাচারের কথা পৌঁছে দিতে হবে।