সুশান্ত ঘোষ, আমাদের ভারত, উত্তর ২৪ পরগণা, ৫ ডিসেম্বর: নবদ্বীপের পর বারাসত। এস আই আর আবহে ফের মিলল প্রচুর আধার ও ভোটার কার্ড-সহ একাধিক নথিপত্র। শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত স্টেশন চত্বরের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় এলাকায়। পরে, খবর পেয়ে রেল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিচয়পত্র-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, বারাসত স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের রেললাইনের ধারে ভ্যাটের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল একাধিক পরিচয়পত্র-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র। এর মধ্যে যেমন রয়েছে ভোটার ও আধার কার্ড, তেমনই রয়েছে রেশন ও প্যান কার্ড-সহ কয়েকটি এটিএম কার্ড-ও। কোথা থেকে সেগুলি এখানে এল তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। উদ্ধার হওয়া পরিচয়পত্র-সহ ব্যক্তিগত নথিগুলি আসল নাকি ভুয়ো, তা খতিয়ে দেখছেন রেলের তদন্তকারীরা। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
এই বিষয়ে বারাসত জিআরপি’র ওসি ধর্মেন্দ্র সিং বলেন, “উদ্ধার হওয়া আধার ও ভোটার কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি কীভাবে এখানে এল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এমনকি, এই পরিচয়পত্রগুলি স্থানীয় নাকি বহিরাগত কারও, সেই বিষয়েও খোঁজ চালানো হচ্ছে। ঘটনার নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য রয়েছে তারও তদন্ত শুরু হয়েছে।”
প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেও বারাসত স্টেশন চত্বরে ছিল কর্মব্যস্ততা। কেউ অপেক্ষা করছেন ট্রেনের জন্য। আবার কেউ সবে ট্রেন থেকে নেমেছেন স্টেশনে। তখনই স্থানীয়দের নজরে আসে বিষয়টি। তাঁরা প্রথমে লক্ষ্য করেন, রেললাইনের নর্দমার ধারে পড়ে রয়েছে বেশ কিছু পরিচয়পত্র। খটকা লাগায় সামনে কিছুটা এগোতেই দেখতে পান, পাশের একটি ভ্যাটে আরও নথিপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেই খবর চাউর হতেই ভিড় বাড়তে থাকে সেখানে। খবর যায় বারাসত জিআরপি-তে। তড়িঘড়ি সেখান থেকে ছুটে আসেন রেল পুলিশের কর্তারা। এরপর, তারাই উদ্যোগ নিয়ে পড়ে থাকা ভোটার, আধার ও প্যান কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রগুলি উদ্ধার করে। কিন্তু, কে বা কারা সেগুলো স্টেশন চত্বরে ফেলে গেল? এর পিছনে কী বা উদ্দেশ্য রয়েছে? তাহলে কি এসআইআরের ভয়েই কেউ এই কাজ করল? উত্তর খুঁজছে রেল পুলিশ।
সুদীপ দাস নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দেখলাম চার ও পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশে নর্দমা ও ভ্যাটের মধ্যে প্রচুর আধার ও ভোটার কার্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পড়ে রয়েছে। দেখে তো মনে হচ্ছে সবই ভুয়ো। আসল হলে কেউ এভাবে ফেলে যেত না। এসআইআর আতঙ্কেই কেউ এসব ফেলে দিয়ে গিয়েছে। অবৈধ লোকজনকে এদেশ থেকে তাড়াতে এসআইআর চালু হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এটা হওয়া উচিত।”
এদিকে, এই ঘটনা ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে। বিজেপি নেতা প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যেভাবে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে ভোটার ও আধার কার্ড-সহ বিভিন্ন পরিচয়পত্র মিলছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের সুরক্ষা আজ প্রশ্নের মুখে। আমাদের সন্দেহ, এর পিছনে কোনও অসাধু চক্র থাকতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ও রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য বেআইনিভাবে আধার ও ভোটার কার্ড তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এর পিছনে শাসক দলের মদত রয়েছে। আমরা এর উপযুক্ত তদন্তের দাবি করছি।”
পালটা জবাব দিয়েছে শাসক শিবিরও। এ নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর দেবব্রত পাল বলেন, “সবকিছুর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা বিজেপির স্বভাব। এর পিছনে কী উদ্দেশ্য রয়েছে তা নিশ্চিত ভাবে রেল পুলিশ তদন্ত করে দেখবে। তদন্ত হলেই সবটা সামনে আসবে। তার আগে এ নিয়ে কিছু বলা উচিত
নয়।”
প্রসঙ্গত, রাজ্যে এসআইআর- এর প্রথম পর্যায়ের কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। মূলত এন্যুমারেশনের ফর্ম ডিজিটাইজেশনের কাজ চলছে জোরকদমে। তারই মধ্যে সামনে আসতে শুরু করেছে একের পর এক অবাঞ্ছনীয় ঘটনা। সম্প্রতি নবদ্বীপের প্রতাপনগরের রাস্তার পাশে নর্দমার ধার থেকে উদ্ধার হয়েছিল অসংখ্য ভুয়ো ভোটার কার্ড। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না-কাটতে এবার বারাসত স্টেশন চত্বর থেকে মিলল আধার ও ভোটার কার্ড-সহ একাধিক নথিপত্র।

