সকালে সুকান্ত মজুমদারের সাথে একান্ত বৈঠকের পরে বিকেলেই রাজ্যের ক্ষেত্রে কড়া বিবৃতি জারি করলেন রাজ্যপাল

আমাদের ভারত, ১১ ফেব্রুয়ারি: শনিবার সকালেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে ঘন্টা দুয়েক একান্তে বৈঠক করেছেন রাজ্যপাল। আর তারপরই রাজ্যের জন্য রাজভবনের তরফে কড়া বিবৃতি জারি করা হয়েছে। আর এই বিবৃতিকে সুকান্ত ম্যাজিক হিসেবে দেখতে চাইছেন তার দলের কর্মী সমর্থকরা।

শনিবার সকালে রাজভবনে যান সুকান্ত। দু’ঘণ্টা তাদের মধ্যে একান্তে বৈঠক হয়। সেখানে রাজ্য সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ সম্বলিত একটি পত্র রাজ্যপালের হাতে তুলে দেন তিনি। আর তারপরেই বিকেলে রাজভবন থেকে সেই সাক্ষাতের কথা উল্লেখ করে একটি বিবৃতি জারি করা হয়েছে। সে বিবৃতিতে আনন্দ বোস রাজ্যের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে কড়া অবস্থানের কথা স্পষ্ট করেছেন।

বিবৃতিতে রাজপাল জানিয়েছে, গত দু মাসের অভিজ্ঞতায় মূলত তিনটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করা দরকার। প্রথমত ভারতের সংবিধানকে অক্ষুন্ন রাখা, দ্বিতীয়টা আইনের শাসন সুনিশ্চিত করা, তৃতীয়ত বাংলার মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করা। নিজের তিনটি মূল মন্ত্রে কথা বলার পরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সঙ্গে তার কথোপকথনের ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্যপাল আনন্দ। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, সুকান্ত তার কাছে রাজ্যের দুর্নীতি ও বেনিয়মের পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগাম সন্ত্রাসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

সুকান্তের সঙ্গে বৈঠকের পর জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার ক্ষেত্রে যথাসময়ে কার্যকরী ও সক্রিয় হস্তক্ষেপ করা হবে। নির্বাচনে হিংসার কোনো স্থান নেই এবং আসন্ন পঞ্চায়েত ভোট যাতে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয় তাও নিশ্চিত করা হবে। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে শাসক দলের হিংসার কথা যে বিজেপি সভাপতি তাকে জানিয়েছেন তাও নিজের বিবৃতিতে উল্লেখ করে দিয়েছেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস।

সকালে রাজ্যপালের সঙ্গে সুকান্তের বৈঠক নিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ কটাক্ষ করেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন বিধানসভায় বিরোধীদল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা যেভাবে রাজ্যপালকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সুকান্ত সেই বিষয়ে ক্ষমা চাইতে রাজভবনে গিয়েছিলেন। কিন্তু
রাজ্যপালের বিবৃতি যে সেই কটাক্ষকের পক্ষে সায় দেয় না তা আর বলার অপেক্ষা রাখল না।

জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল থাকার সময় রাজ্য প্রশাসনের সঙ্গে তার সংঘাত ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলতে শাসক দল। সেই কারণে গত বছর বাদল অধিবেশনে রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলি থেকে রাজ্যপালকে সরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আচার্য পদে বসানোর বিল পাস করেছিল রাজ্য সরকার। সেই বিল ধনখড়ের সময় থেকে রাজভবনে আটকে রয়েছে । শনিবারে বিবৃতিতে বর্তমান রাজ্যপাল জানিয়েছে আগের নিয়ম মেনে পুরনো নিয়মই বহাল রাখা হবে।অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর যে বিল রাজ্যসভার বিধানসভায় পাস করিয়েছিল তা রাজভবনের সীলমোহর পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেল।

লোকায়ুক্ত নিয়োগ করা নিয়ে বিজেপি সভাপতি তাদের আপত্তির কথা রাজপাল আনন্দ বোসকে জানিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল সরকার পক্ষকে একটি অধ্যাদেশ বা অর্ডিন্যান্স আনার পরামর্শ দিয়েছেন। এই বিবৃতি জারির পর বিজেপি সভাপতি সুকান্ত সঙ্গে রাজ্যপালের একান্ত বৈঠকের যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কারণ সুকান্তের দাবি পত্র হাতে পাওয়ার পরই রাজ্যপাল রাজ্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

এই প্রথম বিজেপির কোন নেতা রাজ্যপালের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করলেন আর তারপরেই রাজ্যপাল কঠোর বিবৃতি জারি করেছেন যার যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এখন দেখার রাজ্যপালের এহেন বিবৃতির পর রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজভবন হাতেখড়ির অনুষ্ঠান বা সেন্ট জেভিয়ার্সের মঞ্চে যে রসায়ন তৈরির ছবি ফুটে উঠেছিল সেটা কোনদিকে গড়ায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *