ক্ষমতা ভাগের প্রস্তাব পাওয়ার পর আরও নৃশংস তালিবানরা, দখল করল আফগানিস্তানের ২য় বৃহত্তম শহর কান্দাহার

আমাদের ভারত, ১৩ আগস্ট: হেরাত, গাজনির পর তালিবানরা দখল করেছে কান্দাহার। রাজধানী কাবুলের পর কান্দাহার আফগানিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এখনও পর্যন্ত কাবুলে না পৌঁছতে পারলেও ঠিক তার ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গাজনি রয়েছে তালিবানের কবলেই। চলছে বর্বরোচিত তান্ডবলীলা।
আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের পর থেকেই শুরু হয় তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের কর্মকাণ্ড। আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১২টি ইতিমধ্যেই তালিবানের কবলে। সূত্রের খবর অনুযায়ী তারা এখন লস্কর ঘা-ও দখল করে নিয়েছে। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে রাজধানী কাবুলের সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইছে তালিবান । তারা ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছে কাবুলের দিকে। তালিবান অধিকৃত এলাকা থেকে ঘরছাড়া হয়ে নাগরিকরা আশ্রয় নিয়েছে কাবুলে। ছোট ছোট তাঁবু খাটিয়ে কোনোরকমে সেখানে দিন যাপন করছেন তারা।

সম্প্রতি আমেরিকার প্রতিরক্ষা দপ্তর একটি রিপোর্টে, আগামী ৩ মাসের মধ্যেই তালিবানদের কাবুল দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তাই যুদ্ধ থামাতে রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতা ভাগা ভাগির প্রস্তাবও দিয়েছে আফগানিস্তানের আশরফ ঘনির সরকার।

এর আগে কাতারের রাজধানী দোহায় আমেরিকা- আফগানিস্তানের সাথে শান্তি বৈঠক করেছে তালিবান। এই শান্তি আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়, আফগানের তরফে ১২ আগস্ট যুদ্ধ বিরতির জন্য সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে তালিবানদের।
কিন্তু প্রস্তাবের পরও ২৪ ঘন্টার মধ্যেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় শহর গুলিকে দখল করেছে তারা। তালিবানরা তাদের ক্ষমতা প্রদর্শন করে এই প্রস্তাবকে উপেক্ষা করে পালাবদল করতে চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কাবুলের দূতাবাস থেকে সম্প্রতি ভারত তার ৫০ এর কাছাকাছি নাগরিক উদ্ধার করে এনেছে। একই রকম ভাবে আমেরিকা ও ব্রিটেনও উদ্যোগ নিয়েছে। আফগানিস্তানে আমেরিকা ৩ হাজার এবং ব্রিটেন ৬০০ সেনা পাঠাচ্ছে বলে সূত্রের খবর। তবে তালিবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নয়, সেনা পাঠানো হচ্ছে নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য।
দেশের প্রায় ৬৫ শতাংশই তালিবানের দখলে বলে দাবি করা হচ্ছে। সেখানে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে উদ্ধত তারা। স জানা গেছে, বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র ষশস্ত্র নিয়ে তালিবানরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহরে। প্রকাশ্যে গুলি করছে সরকারি আধিকারিক, কর্মী ও নিরাপত্তারক্ষীদের। সেখানকার নাগরিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতিটি পরিবারের একজন ছেলেকে তালিবানে যোগ দেওয়ার। বাড়ি থেকে বের করে জোর করে হাতে বন্দুক ধরানো হচ্ছে। নির্দেশিকা রয়েছে জোর করে জঙ্গিদের সাথে সেখানকার মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার। মহিলাদের অপহরণ এবং ধর্ষণ করছে তারা বলেও জানা গেছে।
যদিও এ বর্বরতা নতুন নয়। সোভিয়েতের আফগান ছাড়ার পর ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত সেখানে শাসন করেছিল তালিবান। এই ধরনের অমানবিক নির্যাতনের সাক্ষী থেকেছে আফগানিস্তান তখনও। বিশেষ করে মহিলাদের অধিকারকে নির্বিচারে হনন করা হয়েছে। কিন্তু আমেরিকা সেনা কাবুলে দখল নেওয়ার পর তালিবান শিথিল হয়ে যায়। তবে সেখান থেকে একেবারে উচ্ছেদ করা যায়নি তাদের। আমেরিকার সেনা প্রত্যাহারের সূযোগ নিয়ে ফের আফগানিস্তান শাসন করার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *