সৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৮ মার্চ: মুখ্যমন্ত্রী মহামারী আইন জারি করলেও খোঁজ নবান্নের সরকারি আমলার ছেলেই চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিলেন। আর তাতেই ক্ষোভে ফুঁসছে প্রশাসনিক মহল। জানা গিয়েছে অজান্তে নয় সব জেনেও লন্ডন থেকে ফেরার পর শুধুমাত্র মায়ের সরকারি আমলা হবার প্রভাব খাটিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ না শুনে সোজা বাড়ি গিয়েছিলেন ওই তরুণ। বিমান থেকে শুরু করে নিজের এলাকা এবং আর কোথায় কোথায় কার কার সংস্পর্শে এসেছিলেন ওই তরুণ তা জানতে চিরুনি তল্লাশি করছে স্বাস্থ্য দফতর।
অভিযোগ, ওই তরুণ কলকাতায় ফেরার পর বেলেঘাটা আইডি-তে না গিয়ে সোজা বাড়ি চলে যান। যদিও বাড়ির লোকের কথাও তিনি শুনতে চাননি। আমলা স্তরেই এভাবে সচেতনতার অভাব কেন? উঠছে প্রশ্ন।
জানা গিয়েছে, নোভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত ১৮ বছরের ওই তরুণ মায়ের প্রভাব খাটিয়ে ১৬ তারিখ এম আর বাঙ্গুর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। হাসপাতালের ডেপুটি সুপারের ঘরে তাঁকে বসানো হয়। সেখানে এক চিকিৎসক ও দুই স্বাস্থ্যকর্মীকে ডেকে পাঠানো হয়। ওই চিকিৎসক ডেপুটি সুপারের ঘরে এসে পরীক্ষা করে দেখেন তরুণকে। সঙ্গে সঙ্গেই বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে গিয়ে দেখানো ও ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু অভিযোগ, ওই তরুণ তখন বাড়ি ফিরে চলে যান।
বিষয়টি জানানোর পর বেলেঘাটা আইডির তরফেও স্বাস্থ্য ভবন মারফত যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ওই তরুণ নিজে বা তাঁকে নিয়ে তাঁর পরিবার বেলেঘাটা আইডিতে দেখাতে আসেননি বা ভর্তি করেননি বলে অভিযোগ। শেষে অনেক জোরাজুরির পর ১৭ মার্চ মঙ্গলবার সকালে ওই তরুণ বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে আসেন এবং ভর্তি হন। তারপরই নমুনা পরীক্ষার পর দেখা যায় ওই তরুণ নভেল করোনাভাইরাস পজিটিভ।
জানা গিয়েছে, ওই তরুণ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ইংল্যান্ডে একটি জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই পার্টিতেই বেশ কয়েকজন করোনা সংক্রামিত যুবক-যুবতী উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকেই ওই তরুণের শরীরে বাসা বেঁধেছে করোনা। কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানিংয়ে উপসর্গ ধরা পড়েনি। চিকিৎসকদের মতে, ভাইরাস ওই মুহূর্তে ইনকিউবেশনে থাকায় যন্ত্র তা বুঝতে পারেনি। এদিকে ওই তরুণ যে পার্টিটা গিয়েছিলেন, তা প্রথমে নিজের বাড়ির লোককেও বলেননি।
বাড়ি ফেরার পর ওই পার্টির কথা জানতে পারে তরুণের পরিবার। প্রথমে বেলেঘাটা আইডি তে দেখানো হলেও ওই তরুণ মায়ের প্রভাব খাটিয়ে ভর্তি হতে চাননি। পরে তাকে বুঝিয়ে বেলেঘাটা আইডিতে নিয়ে এসে পরীক্ষার পর দেখা যায়, তিনি করোনাভাইরাস পজিটিভ। জানা গিয়েছে, বেলেঘাটা আইডিতে আসার আগে তিনি এম আর বাঙুর হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তাই বাঙুর হাসপাতালের নোডাল অফিসার আইসোলেশনে চলে গিয়েছেন।
এদিকে আরও জানা গিয়েছে, ওই আমলা নবান্নের পাশাপাশি এই সময়কালের মধ্যে রাইটার্সেও বৈঠক করেন। রাইটার্সের ৫ নম্বর ব্লকে ৩ তলায় ওই আমলার অফিস রয়েছে। সোমবার দিনে সেখানে ওই জয়েন্ট সেক্রেটারি অফিস করেন, সবার সঙ্গে দেখা-মেলামেশা করেন বলেও জানিয়েছেন রাইটার্সের কর্মীরা। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে নবান্নতেও। নবান্নের ষষ্ঠ তলায় ওই আমলার ঘর বুধবারই সিল করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্যানিটেশন করা হয়েছে রাইটার্সের ঘরটিও।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, গত তিন দিন ওই তরুণের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন, তাঁদের সকলকে পর্যবেক্ষণে রাখার চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। রবিবার লন্ডন থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে শহরে ফেরেন তিনি। ওই তরুণের সঙ্গে যাঁরা বিমানে ফিরেছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকের সন্ধান শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই বিমানযাত্রীদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই বিমানের চালক, কো-পাইলট ও কেবিন ক্রুদেরও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। যেহেতু ওই তরুণের মা একজন উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা তাই তিনি সোম এবং মঙ্গলবার নবান্নে কারোর সংস্পর্শে এলে তাকেও আইসোলেশন বা কোয়ারেন্টাইন করার কথা ভেবে রাখা হয়েছে।