Shil-Nora, Bankura, প্রাচীন রীতি মেনে সরস্বতী পূজায় রাঢ়বঙ্গে শীল- নোড়া পুজো, ব্যাপক চাহিদা গুগলি- শামুক ও দলের

সোমনাথ বরাট, আমাদের ভারত, বাঁকুড়া, ৩ ফেব্রুয়ারি: সরস্বতী পুজোর সঙ্গে সঙ্গে রাঢ়বঙ্গের বধূরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন শীল ষষ্ঠী পূজায়। পুজোর পাশাপাশি আয়োজন হয় পান্তা ভাতের।সরস্বতী পুজোর পরদিন পালিত হয় ষষ্ঠী পুজো। ওই দিন অরন্ধন। আগের দিন অর্থাৎ সরস্বতী পুজোর দিন রাতে তৈরী ভাত তরিতরকারি এদিন ভোজ্য। আর রাতে রান্না শেষে গৃহকর্ত্রী শীল নোড়াকে নতুন কাপড়ে সাজিয়ে রাখেন। সঙ্গে নিবেদন করেন দল, শামুক, বাঁশ পাতা ইত্যাদি। পরদিন সকালে পুরোহিত ওই শীল নোড়াকে হলুদ, দই ইত্যাদি দিয়ে পুজো করেন। বাড়ির পুরুষরাও চরম ব্যস্ত হয়ে পড়েন বধূদের পুজোয় সহায়তা করতে। কার্যত: এই দিনে প্রতিটি বাড়ির সকলে ব্যস্ত নিজ নিজ কাজে।

সরস্বতী পূজা বাঙালিদের কাছে হয়ে ওঠে ভ্যালেন্টাইন ডে। সে নিয়েই বাড়ির শিশু-কিশোরদের মেতে থাকতে দেখা গেছে। অন্যদিকে এই বাগদেবীর আরাধনার রাতে রাঢ়বঙ্গের বধূরা মেতে ‘ওঠেন শীল ষষ্ঠী’ পুজোয়।

শীল-নোড়াকে দেবতা মেনে সন্তান ও পরিবারের মঙ্গল কামনায় এই পুজোর আয়োজন করে থাকেন বাড়ির বধূরা। অত্যন্ত জনপ্রিয় এই লোকাচার। রাঢ়ের এই ষষ্টি পূজাকে কেন্দ্র করে সবজি বাজারগুলি অদ্ভূত ভাবে পাল্টে যায়। এই দেবী ষষ্টির পুজোর উপকরণ হলুদ ও সিঁদুরের পাশাপাশি শামুক (গেঁড়ি গুগলি), জলজ দল, মেথি। এজন্য এদিন জেলার প্রতিটি বাজার ভরে উঠেছিল শামুক(গেঁড়ি গুগলি), জলজ দল, পুকুরের পাঁক ও বাঁশ পাতা। এগুলি চড়া দামে কেনাবেচা হতে দেখা যায়।

জেলার বিশিষ্ট লোকসংস্কৃতিবিদ ও শিক্ষক তপন চৌধুরি জানান, শামুক (গেঁড়ি গুগলি) ও জলজ দলকে পবিত্র ও পরিবারের কল্যাণকারী ও দেবী যষ্টির অত্যন্ত প্রিয় মানা হয়। গৃহবধূদের এই লোকাচারে ষষ্ঠী ঠাকুরের ৬০ ছেলে মেয়ের ছবি এঁকে শীল-নোড়া পুজো করা হয়। সরস্বতী পুজোর দিন রাতে শীল-নোড়াকে ভাল করে ধুয়ে ঘরের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে তার গায়ে হলুদ কাপড় বা গামছা জড়িয়ে দেওয়া হয়। শিলের মাথার ওপর খড়িমাটি দিয়ে আঁকা হয় ষষ্ঠীর ৬০ ছেলে ও মেয়ের ছবি। বাড়ির বধূরাই এই ছবি আঁকেন। তাই অপটু হাতে আঁকা এই ছবিগুলি এক লোকচিত্রের আকার নেয়।
এছাড়া সরস্বতী পুজোর দিন রান্না করে পরের দিন পান্তা করে খাবার নিয়ম রয়েছে রাঢ়ে। সরস্বতী পুজোর পরের দিন গ্রামের নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসে ষষ্ঠী ঠাকুরের ব্রতকথা শোনার আসর। গ্রামের মহিলারা সেই জায়গায় গোল হয়ে বসে ব্রতকথা শোনেন। গ্রামের এক মহিলাই থাকেন গল্পের কথক। এভাবেই সরস্বতি পুজোকে কেন্দ্র করে অন্যরকম উৎসবে মাতে রাঢ়।

জেলার বাজারগুলিতে শামুক (গেঁড়ি গুগলি) ও জলজ দল রবিবার বেশ ভালই বিক্রি হয়েছে। রামপুর বাজারের সবিতা রায় ও বারিদ রায় জানান, এদিন সকাল থেকেই এসবের চড়া চাহিদা ছিল। গত ১০ বছর ধরে তারা সরস্বতী পুজোর সময় শামুক (গেঁড়ি গুগলি) ও জলজ দল বিক্রি করে আসছেন। এসবের চাহিদা আজও কমেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *