চিন্ময় ভট্টাচার্য, আমাদের ভারত, ২৩ মে: ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’-এর জেরে পানীয় জল ও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন কলকাতা ও জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এই অবস্থায় জনপ্রতিনিধি থেকে সিইএসসি, বিদ্যুৎকর্মী অথবা প্রশাসনিক আধিকারিক- সামনে পেলেই ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বাসিন্দারা। ক্ষোভের মুখে পিঠ বাঁচাতে পরস্পরের ওপর দায় চাপানো শুরু করেছেন তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব।

যেমন, কলকাতা পুরসভার ৮১ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর জুঁই মজুমদার বিশ্বাস। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ভাইয়ের স্ত্রী জুঁই গত দু’দিনের মতো শনিবারও এলাকায় আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের পাশে থাকতে বের হয়েছিলেন। ঝড়ে বুধবার রাত থেকে ওই এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে জল ও বিদ্যুৎ নেই। বস্তি এলাকায় বহু ঘর ভেঙ্গে গিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তাই জুঁই বিশ্বাসের কাছে ক্ষোভ উগরে দেন। প্রথমে জুঁইদেবী করোনা সংক্রমণ থেকে শুরু করে নানা ইস্যুতে রাজ্যের প্রতি বঞ্চনার ছবিটা ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাতে বাসিন্দাদের ক্ষোভ না-মেটায় তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘এই করুণ পরিস্থিতিতে কেবল তৃণমূল নেতৃত্ব জনতার পাশে। অন্য দলের কারও টিকিও এই কঠিন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ খুঁজে পাবেন না।’

তৃণমূল নেতৃত্বের এই তোপের মুখে পালটা আসরে নেমে পড়েন বিজেপি নেতারা। গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘১০ বছর শাসন ক্ষমতায় থেকেও আজ রাজ্যের গভীর সংকটের সময়ে দূর্নীতিগ্রস্ত শাসকদলের নগ্ন চেহারা আবার বেরিয়ে এল। প্রচণ্ড গতির ঝড় বহু রাজ্যবাসীর ছোট ছোট দুর্বল বাড়ির চাল উড়িয়ে নিয়ে গেছে। গৃহহীন হয়েছেন, প্রাণ হারিয়েছেন অনেক মানুষ। দেওয়াল ধসে, চাল উড়ে এত মানুষের মৃত্যূ হল কেন? প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা খাতে গত কয়েক বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ২৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি পশ্চিম বাংলায় পাঠিয়েছে এবং সরকারি নথি অনুযায়ী অন্তত ১৫ লক্ষ পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে। এই সংখ্যা দুটোই ভারতবর্ষের অন্য যেকোনও রাজ্যের থেকে অনেক বেশি। তাহলে সেই বাড়ির টাকা কারা পেল?’
এই পরিস্থিতিতে এদিন ক্যানিং যাওয়ার পথে বারুইপুর-বাসন্তী ঢালাই ব্রিজের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষকে আটকে দেয়। পালটা আসরে নেমে পড়ে বিজেপি। রাজ্য বিজেপি নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, ‘রাজনীতিটাকে নোংরা বানিয়ে দিয়েছে ৩৪ বছরে বাম আর ৯ বছরে তৃণমূল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলছে বিজেপির সাংসদ, বিধায়করা মানুষের পাশে নেই কেন? আর বাস্তবে পুলিশ দিয়ে তাঁদের রাস্তা আটকে দেওয়া হচ্ছে। অসহায় সাধারণ মানুষের কাছে তাঁদের পৌঁছতেই দেওয়া হচ্ছে না। নির্লজ্জ প্রশাসন!’

জল, বিদ্যুৎহীন এই অসহায় অবস্থায় এইসব রাজনৈতিক চাপানউতোর দেখতে রাজি নন বাসিন্দারা। তাঁরা শনিবার দফায় দফায় কলকাতা, শহরতলি এবং বিভিন্ন জেলায় রাস্তা অবরোধ করেন। রুবি মোড় থেকে শুরু করে কল্যাণী হাইওয়ে, শহর-শহরতলি এবং জেলার বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা বন্ধ থাকায় পথচলতি গাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।

